ডেস্ক: ভোট দেওয়ার পর হাতে লাগিয়ে দেওয়া কালিটার দিকেই নজর থাকে সবথেকে বেশি। আর সেই কালি ওঠে না বলেই উত্তেজনা যেন একটু বেশি থাকে। যেন প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে ওঠার চিহ্ন মাত্র। এই কালির উৎপত্তিও ভারতে। কারণ এখন ভারত বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশ। তবে এই ঐতিহ্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে দিন দিন। কিভাবে ভারত এই কালি তৈরি করে তা সবার অজানা।
‘মাইসোর পেইন্টস অ্যান্ড ভার্নিশ লিমিটেড’, মহীশূরের রাজাদের প্রতিষ্ঠিত এ কোম্পানিটি স্বাধীনতার পর কর্নাটক সরকার অধিগ্রহণ করে। এটাই ভারতে ভোটের কালির একমাত্র প্রস্তুতকারক। তারাই ডিডি নিউজকে জানিয়েছে যে এই নির্বাচনের জন্য প্রায় ২৬.৫ লক্ষ ফিয়াল বা ছোট বোতল তৈরি করা হয়েছে। দেশের সংসদীয় রাজনীতিতে যা একচুলও বদলায়নি তা হল ভোটের কালি।
একজন ব্যক্তি যাতে একাধিক ভোট না দিতে পারে সে কারণেই তৈরি হয়েছে এই কালি। ভারতীয় নির্বাচনে দীর্ঘদিন ধরে কালি ব্যবহার করা হয়ে আসছে। অন্যান্য নির্বাচনে ব্যবহার করার জন্য ভারত-তৈরি বিশ্বের অন্যান্য দেশও সহজেই আপন করেছে। এখন ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে তার প্রমাণপত্রে পরীক্ষা করা এবং ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে বোতাম টিপে ভোট দেওয়ার আগে, তার আঙুলে অমার্জনীয় এই কালি লাগানো হয়। ভোটের ধরন পাল্টে গেলেও কয়েক দশক ধরে বদলায়নি এই রীতি।
এ কালির বিশেষত্ব কী? আজও ভারতে লক্ষ লক্ষ ভোটার নিজের ভোট দেওয়ার পর আঙুলের সেই দাগ দেখিয়ে গর্বভরে ছবি তোলেন বা সোশ্যাল মিডিয়ায় সেলফি আপলোড করেন। বস্তুত ওই কালির দাগেই তারা প্রমাণ করতে চান, তারা গণতন্ত্রের উৎসবে সামিল হয়েছেন। দেশের নির্বাচনে যে বিশেষ কালিটি ব্যবহার করা হয়, তা আঙুলের কম করে ৭২ থেকে ৯৬ ঘণ্টা এবং নখের কিউটিকলে কম করে দুই থেকে চার সপ্তাহ থেকে যায়।
‘নিয়ম অনুযায়ী কোম্পানির শুধু দু’জন সিনিয়র কেমিস্ট এটা জানতে পারেন আর তারা কেউ অবসর নিলে তাদের বাছাই করা উত্তরসূরিকে এটা জানিয়ে যান।’ বর্তমানে, প্রতিটি ফিয়াল ১৭৪ টাকায় বিক্রি হয়। এমনকী এই ভোটের কালি কানাডা, ঘানা, নাইজেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, মালয়েশিয়া, নেপাল, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং মালদ্বীপ-সহ ২৫ টিরও বেশি দেশে রপ্তানি করা হয়।
প্রসঙ্গত, এই কালি কীভাবে তোলা যায়, তা নিয়ে নানা ‘টোটকা’ বাতাসে ভাসলেও আজ পর্যন্ত এর কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি এবং গ্রহণযোগ্য প্রমাণ নেই। তাই ৬২ বছর ধরে ভারতের নির্বাচনে আজও গুরুত্বপূর্ণ এই কালি।