মাংস খেকো ব্যাকটেরিয়া, ৪৮ ঘন্টার মধ্যেই মৃত্যু !

ডেস্ক: বর্তমান সময়ে জাপান একটি অত্যন্ত বিরল রোগের সাথে লড়াই করছে। এই রোগের নাম দেওয়া হয়েছে স্ট্রেপ্টোকক্কাল টক্সিক শক সিনড্রো। সবথেকে চাঞ্চল্যকর বিষয় হল, এই রোগের কারণের পেছনে রয়েছে একটি মাংস খেকো ব্যাকটেরিয়া। এটি এতটাই বিপজ্জনক যে এই ব্যাকটেরিয়া ৪৮ ঘন্টার মধ্যেই মানুষকে হত্যা করে। জাপানের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ইনফেকশাস ডিজিজেস অনুসারে, এখন পর্যন্ত STSS-এর প্রায় ১,০০০ কেস রিপোর্ট করা হয়েছে।

স্ট্রেপ্টোকোকাল টক্সিক শক সিনড্রোম সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া জাপানে দীর্ঘদিন ধরেই দাপট দেখাচ্ছে। এই ব্যাকটেরিয়াকে বলা হয় স্ট্রেপ্টোকক্কাস। এর দু’টি ভেরিয়েন্ট তথা টাইপ রয়েছে। প্রথমটি গ্রুপ-এ স্ট্রেপ্টোকক্কাস এবং দ্বিতীয়টি গ্রুপ-বি স্ট্রেপ্টোকক্কাস। আমরা যদি সর্দি, কাশি, জ্বর বা গলা ব্যথায় ভুগি, তাহলে গ্রুপ-এ স্ট্রেপ্টোকক্কাসের মধ্যে সেটি রিপোর্ট করা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি নিজে নিজেই ঠিক হয়ে যায়। অনেক সময় আবার অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হয়। অন্যদিকে, গ্রুপ বি স্ট্রেপ্টোকক্কাস ক্ষতিকারক নয়। এটি অন্ত্র ইত্যাদিতে পাওয়া যায়।

এমতাবস্থায়, বিখ্যাত ভাইরোলজিস্ট এবং বিআর আম্বেদকর সেন্টার ফর বায়োমেডিকেল রিসার্চের ডাইরেক্টর অধ্যাপক ড. সুনীত সিং নিউজ 18-কে জানিয়েছেন, গ্রুপ-এ স্ট্রেপ্টোকক্কাসের কিছু স্ট্রেন কখনও কখনও খুব বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। এই ক্ষেত্রে তাদের বলা হয় ইনভেসিস গ্রুপ-এ স্ট্রেপ্টোকক্কাস। এটি যে অবস্থার সৃষ্টি করে তাকে বলা হয় স্ট্রেপ্টোকক্কাল টক্সিক শক সিন্ড্রোম। জাপানে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ছে।

অধ্যাপক সুনীতি সিং বলেছেন যে এই ব্যাকটেরিয়াকে মাংস খাওয়া ব্যাকটেরিয়া বলা হচ্ছে। আসলে, এটি সরাসরি মাংস খায় না। বরং এটি মানুষের টিস্যুকে হত্যা করে। তাই একে Flesh-Eating বলা হয়। যখন গ্রুপ-এ স্ট্রেপ্টোকক্কাস টিস্যুকে মেরে ফেলে, তখন সেই অবস্থাকে বলা হয় নেক্রোটাইজিং ফ্যাসাইটিস। “নেক্রোটাইজিং” মানে টিস্যুর মৃত্যু এবং “ফ্যাসাইটিস” মানে প্রদাহ।

গ্রুপ-এ স্ট্রেপ্টোকক্কাস ব্যাকটেরিয়া ক্ষত বা ঘা-এর মধ্যে দিয়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ইনফেকশনের পর এই ব্যাকটেরিয়া ক্ষতস্থানে এক ধরণের টক্সিন নিঃসরণ করে। যেটি পেশী, রক্তনালী ও স্নায়ু ধ্বংস করতে থাকে। এই বিষ এতটাই বিপজ্জনক যে ক্ষত বা সংক্রামিত স্থান পচতেও শুরু করে।

গ্রুপ-এ স্ট্রেপ্টোকক্কাস দ্বারা নির্গত টক্সিন যখন গভীরে গিয়ে রক্ত ​​সঞ্চালনে পৌঁছে যায় তখন একটি বিষাক্ত সিনড্রোম দেখা দেয়। যাকে বলা হয় স্ট্রেপ্টোকক্কাল টক্সিক শক সিনড্রোম। জাপানে এটাই হচ্ছে। এটির সঠিকভাবে চিকিৎসা না করালে তা মারাত্মক হতে পারে। এমনকি, রোগী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে মারাও যেতে পারেন।
এই রোগের লক্ষণ গুলি হলো জ্বর , সর্দি, কাশি, হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, দ্রুত শ্বাস নেওয়া এবং পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়া।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনার পর জাপানের শিথিলতার কারণে এই ঘটনা বাড়ছে। শুধু জাপানেই নয়, অন্যান্য অনেক দেশেও একই ধরণের ঘটনা সামনে আসছে। যার মধ্যে রয়েছে ইউরোপের একাধিক দেশ। জানিয়ে রাখি যে, গত বছরও জাপানে STSS-এর ৯০০ টিরও বেশি কেস রিপোর্ট করা হয়েছিল।

এই প্রসঙ্গে ভারতের কথা বলতে গেলে সাধারণত ৫ থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশুরা গ্রুপ-এ স্ট্রেপ্টোকক্কাস দ্বারা আক্রান্ত হয়। তবে এটি এতটাও গুরুতর নয় যে এটি এখানে স্ট্রেপ্টোকক্কাল টক্সিক শক সিনড্রোমের রূপ নিতে পারে। অধ্যাপক সুনীতি সিং বলেছেন যে, কিছু দেশে এই ব্যাকটেরিয়া দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সেখানকার আবহাওয়ার কারণে। যেমন আমেরিকা বা জাপান। ভারতে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। তাই চিন্তা করার দরকার নেই। যদিও, কারোর কোনো আঘাত বা উন্মুক্ত ক্ষত থাকলে অবশ্যই যথাযথ চিকিৎসার বিষয়েও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *