কতিথ আছে ,মর্তে নেমে আসেন জগন্নাথ দেব স্নান যাত্রার দিন !

ডেস্ক: স্নানযাত্রার দিন মন্দিরের উত্তর দিকের কূপ থেকে জল এনে মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে শুদ্ধিকরণ করা হয়। তারপর ১০৮টি কলসে সেই জল নিয়ে বিগ্রহগুলিকে স্নান করানো হয়।

অক্ষয় তৃতীয়ায় চন্দন উত্‍সবের পর থেকেই শুরু হয়ে যায় প্রস্তুতি। নতুন রথ তৈরি করা থেকে শুরু করে রথের সব কাজকর্ম শুরু করে দেওয়া হয়। সেদিনের পর থেকে ঠিক ৪২দিনের মাথায় পালিত হয় দেবস্নান যাত্রা। তার ঠিক ১৫ দিন পর পালিত হয় বাঙালি তথা আপামর হিন্দুদের জনপ্রিয় উত্‍সব, রথযাত্রা।

কথিত আছে, এই স্নানযাত্রার দিন জগন্নাথদেব মর্ত্যে নেমে আসেন। সেই উপলক্ষ্যেই এই বিশেষ স্নানপর্ব চলে। প্রথা অনুযায়ী, পুরীর জগন্নাথ মন্দিরেরর রথের দড়িতে টান পড়লেই টান পড়ে মাহেশের রথের দড়িতেও। শাস্ত্র অনুসারে, স্নানযাত্রার দিন অর্থাত্‍ জ্যৈষ্ঠমাসের পূর্ণিমা তিথিতে সস্বয়ম্ভু মনুর ‌যজ্ঞের প্রভাবে আবির্ভূত হয়েছিলেন জগন্নাথ।পঞ্চাঙ্গ মতে, জ্যৈষ্ঠমাসের পূর্ণিমা তিথিতেই পালিত হচ্ছে এবারের পবিত্র স্নানযাত্রা।

মনে করা হয়, এই তিথিকে জগন্নাথদেবের জন্মদিন। প্রতি বছর দেবস্নান পূর্ণিমায় স্নানযাত্রার রীতি পালিত হয়। এবছর জ্যৈষ্ঠ পূর্ণিমাতেই পড়েছে স্নানযাত্রা উত্‍সব। এই স্নানযাত্রা শুরুর আগে রত্নবেদীতে অবস্থান করেন জগন্নাথদেব। প্রথমে জগন্নাথ, তারপর বলরাম, একদম শেষে সুভদ্রাকে পুষ্পাঞ্জলি দেওয়া হয়। তারপরে তিনদেবতাকেই স্নানবেদীতে নিয়ে যাওয়া হয়।

স্নানবেদীতেই পালিত হয় মঙ্গল আরতি। তারপর সূর্যদেবের পুজোর পরে তিনদেবতাকে মহাপুণ্যস্নানের জন্য প্রস্তুত করানো হয়। স্নানযাত্রার পূর্বসন্ধ্যায়, মানে শুক্রবার জগন্নাথ, বলভদ্র, সুভদ্রা, সুদর্শন চক্র ও মদনমোহনের বিগ্রহ নিয়ে একটি বিশাল শোভাযাত্রা বের করা হবে। মন্দিরের গর্ভগৃহ থেকে বের করে স্নানবেদীতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেইসময় ভক্তেরা জগন্নাথকে সম্মুখ থেকে দর্শন করতে পারেন।
ভক্তদের বিশ্বাস, এদিন পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে দেবতাকে দর্শন করে সকল পাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। বিরল ও অভাবনীয় একটি দৃশ্য ও অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে অগণিত ভক্তের সমাগম হয়। স্নানযাত্রার দিন মন্দিরের উত্তর দিকের কূপ থেকে জল এনে মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে শুদ্ধিকরণ করা হয়। তারপর ১০৮টি কলসে সেই জল নিয়ে বিগ্রহগুলিকে স্নান করানো হয়।

সেদিন সন্ধ্যেবেলা স্নানপর্বের সমাপ্তির পর জগন্নাথ ও বলভদ্রকে গণেশের রূপে সাজানোর জন্য হস্তীমুখ-বিশিষ্ট মস্তকাবরণী পরানো হয়। জগন্নাথের এই রূপটিকে বলা হয় ‘গজবেশ’।

রীতি অনুসারে, স্নানযাত্রার পর জগন্নাথদেব বেজায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। তীব্র জ্বরে কাবু হয়ে ঘরবন্দি থাকেন। বন্ধ করে দেওয়া হয় মন্দিরের সব কটি দরজা। এই সময় তাকে রাজবৈদ্যের চিকিৎসাধীনে গোপনে একটি সংরক্ষিত কক্ষে রাখা হয়। জগন্নাথের এই অসুস্থতার পর্যায়টি ‘অনসর’ নামে পরিচিত। দেব দর্শনের জন্য বিগ্রহের পরিবর্তে মূল মন্দিরে তিনটি পটচিত্র রাখা হয়। বিশ্বাস করা হয়, অনসর পর্যায়ে জগন্নাথ ব্রহ্মগিরিতে অলরনাথ রূপে অবস্থান করেন। কথিত আছে, রাজবৈদ্যের আয়ুর্বৈদিক ‘পাঁচন’ খেয়ে এক পক্ষকালের মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠেন তিনি। তারপর ভক্তেরা আবার দেবদর্শন করতে পারেন। ভোগ হিসেবে সেইসময় খুব সাধারণ খাবার নিবেদন করা হয়।

জগন্নাথ প্রভুর স্বাস্থ্যের অবনতির কারণে, টানা ১৪দিনের জন্য ঘরবন্দি দশা কাটান তিনি। এই কারণে তিনি ভক্তদেরও দর্শন দেন না তিনি। বন্ধ থাকে মন্দিরের দরজাও। জগন্নাথ সুস্থ হয়ে উঠলেও শরীরকে চাঙ্গা করতে মাসির বাড়িতে হাওয়া বদলের জন্য গমন করেন। সেই যাত্রা রথযাত্রা হিসেবে পরিচিত।
আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয় তিথিতে রথযাত্রা উত্‍সব পালিত হয়। মাসির বাড়ি গুণ্ডিচা দেবী মন্দিরে দেবতাদের দর্শনের জন্য ভক্তদের ভিড় জমতে থাকে। ৭ দিন বিশ্রামের পর দশমীর দিন তিনদেবতা ফের পুরীর প্রধান মন্দিরে ফিরে আসেন। বিশেষ রীতিতে পুজো করে ফের ভক্তদের জন্য মন্দিরের দরজা খুলে দেওয়া হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *