পরিবেশগত ক্ষেত্রে ভারতের পরিবর্তন!

ডেস্ক: ভারতের সর্বদাই গভীর শ্রদ্ধাবোধ রয়েছে। অথর্ব বেদে লেখা আছে, “বসুন্ধরা আমাদের মা, আমরা তাঁরই সন্তান।” যুগ যুগ ধরে এই ভাবনা আমাদের জীবনযাত্রায় অঙ্গাঙ্গী ভাবে যুক্ত। গত ১১ বছর ধরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে শাশ্বত এই ধারণাটি আরও শক্তিশালী হয়েছে, কার্যকর হয়েছে। আন্তর্জাতিক স্তরে জলবায়ু সংক্রান্ত কার্যকলাপের ক্ষেত্রে ভারতের ভূমিকার পরিবর্তন ঘটেছে। আগে ভারত অন্য দেশকে অনুসরণ করতো, বর্তমানে সে নিজেই নেতৃত্ব দিচ্ছে। স্পষ্ট নীতি, জনসাধারণের অংশীদারিত্ব এবং পরিবেশ বান্ধব জ্বালানি ও সুস্থায়ী ব্যবস্থাপনার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের মাধ্যমে সরকার সকলের জন্য এমন এক ভবিষ্যৎ গড়ে তুলছে যা হবে পরিবেশ বান্ধব ও স্বাস্থ্যকর।
আন্তর্জাতিক মঞ্চে জলবায়ু সংরক্ষণের ক্ষেত্রে প্রথম সারির দেশ:
প্যারিসে কপ২১ (কনফারেন্স অফ পার্টিজ ২১)-এ, ভারত ২০৩০-এর মধ্যে মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের ৪০ শতাংশ, জীবাশ্ম জ্বালানি নয়, এ ধরনের জ্বালানি থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্র ধার্য করেছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের অনেক আগে ২০২১-এর নভেম্বরে এই লক্ষ্য অর্জিত হয়।
গ্লাসগোয় কপ২৬-এ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী লাইফ (এলআইএফই-লাইফস্টাইল ফর এনভায়রনমেন্ট)-এর সূচনা করেন। এর মাধ্যমে সুস্থায়ী কিছু অভ্যাস গড়ে তোলার প্রতি সকলকে উৎসাহিত করা হয়। বর্জ্য পদার্থ থেকে সম্পদ সৃষ্টি করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। এছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য ভারত ৫টি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করেছে, যাকে পঞ্চামৃত বলা হচ্ছে।
২০২৪-এর নভেম্বরে বাকুতে কপ২৯-এ ভারত জলবায়ু পরিবর্তন রোধে গৃহীত পদক্ষেপগুলি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করে। এছাড়াও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অংশীদারদের মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ব্যবহারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগগুলি সম্পর্কে ভারত বিস্তারিত জানিয়েছে। বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো, শিল্প ক্ষেত্রে কার্বন নিঃসরণ হ্রাস, সৌরশক্তি এবং মহিলাদের নেতৃত্বে জলবায়ু সংক্রান্ত ক্ষেত্রে বিভিন্ন উদ্যোগের বিষয়ে এই সম্মেলনে আলোচিত হয়। এছাড়াও সুইডেনের সঙ্গে যৌথভাবে কোয়ালিশন ফর ডিজাস্টার রেজিলিয়েন্ট ইনফ্রাস্ট্যাকচার – সিডিআরআই, আন্তর্জাতিক সৌর জোট – আইএসএ এবং ন্যাচারাল রিসোর্সেস ডিফেন্স কাউন্সিল – এনআরডিসি নিয়ে সম্মেলনে পৃথক অধিবেশনে মত বিনিময় করা হয়েছে।
পিএম সূর্যঘর : মুফত বিজলি যোজনা (পিএমএসজিএমবিওয়াই):
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২০২৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পিএমএসজিএমবিওয়াই-এর সূচনা করেন। এটি বাড়ির ছাদে সৌরশক্তি উৎপাদনে সর্ব বৃহৎ এক উদ্যোগ। যে সব পরিবারের আয় কম তারা যাতে এর থেকে উপকৃত হন, সেই লক্ষ্যে এই প্রকল্পের সূচনা হয়েছে। ২০২৫-এর এপ্রিল পর্যন্ত ১১.৮৮ লক্ষ বাড়ির ছাদে ইতিমধ্যে সোলার প্যানেল বসানো হয়েছে। এই প্রকল্পের সুবিধা প্রাপকরা যাতে সহজেই ভর্তুকি এবং ঋণ পান তা নিশ্চিত করতে একটি ডিজিটাল ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে। এর ফলে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি আরও সহজে এবং ব্যয় সাশ্রয়ী পদ্ধতিতে ব্যবহার করা যাবে।
উজালা প্রকল্প (উন্নত জ্যোতি বাই অফোর্ডেবল এলইডিজ ফর অল):
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২০১৫-র ৫ জানুয়ারি এই প্রকল্পের সূচনা করেন। এর আওতায় এলইডি বাল্ব, টিউবলাইট এবং পাখা বিতরণ করা হয়। প্রাথমিক ভাবে ডোমেস্টিক এফিসিয়েন্ট লাইটিং প্রোগ্রাম বা ডিইএলপি কর্মসূচি হিসেবে এটি পরিচিত ছিল। বিদ্যুতের ব্যবহার কমানো এবং লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছে ব্যয় সাশ্রয়ী মূল্যে বাল্ব বিতরণ করা এই প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য। ২০২৫-এর ৬ জানুয়ারি প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী উজালা প্রকল্পে ৩৬.৮৭ কোটি এলইডি বাল্ব বিতরণ হয়েছে।
বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে:
২০২২ সালে সর্বভারতীয় স্তরে বাঘের সংখ্যা সংক্রান্ত যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে সেই প্রতিবেদন অনুসারে পঞ্চম সাইকেলে (সাধারণত প্রতি চার বছরে একটি করে সাইকেল বিবেচিত হয়) দেশে বাঘের সংখ্যা ৩৬৮২। সারা বিশ্বে বিভিন্ন বনাঞ্চলে যত বাঘ রয়েছে তার ৭৫%-এরও বেশি বাঘ ভারতে বসবাস করে।
ভারতের ১৩টি সমুদ্র সৈকত ব্লু ফ্ল্যাগ শংসাপত্র পেয়েছে।
ভারতের ১৩টি সমুদ্র সৈকত ব্লু ফ্ল্যাগ শংসাপত্র পেয়েছে:
ডেনমার্কের দ্য ফাউন্ডেশন ফর এনভায়রনমেন্ট এডুকেশন বিশ্ব জুড়ে বিভিন্ন জায়গায় প্রাকৃতিক বিভিন্ন উপাদানের ওপর ভিত্তি করে ব্লু ফ্ল্যাগ শংসাপত্র দিয়ে থাকে। ১৯৮৫ সালে ফ্রান্সে পরিবেশগত ব্যবস্থাপনার উৎকর্ষতাকে স্বীকৃতি দিতে এই কর্মসূচি শুরু হয়। পরিবেশকে রক্ষা করা, সুরক্ষা এবং সুস্থায়ী পর্যটনের জন্য ব্লু ফ্ল্যাগ পুরস্কার প্রদান করা শুরু হয়। ১৯৮৭ সালে ইউরোপের ১০টি রাষ্ট্রে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়। ভারত ২০১৮ সালে ব্লু ফ্ল্যাগ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে।
গোবর্ধন (গ্যালভানাইজিং অর্গানিক বায়ো-অ্যাগ্রো রিসোর্সেস ধন):
গ্যালভানাইজিং অর্গানিক বায়ো-অ্যাগ্রো রিসোর্সেস ধন বা গোবর্ধন প্রকল্প ভারত সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রকের সঙ্গে সম্পর্ক যুক্ত একটি বৃহৎ প্রকল্প। স্বচ্ছ ভারত মিশন-গ্রামীণ-এর আওতায় ২০১৮ সালে এই প্রকল্পের সূচনা হয়। গোবর এবং কৃষিকাজে পড়ে থাকা বর্জ্যকে মূল্যবান সম্পদে পরিণত করাই এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। এই প্রকল্পে বায়োগ্যাস এবং সার উৎপাদন হয়। গ্রামাঞ্চলে পরিচ্ছন্নতা, যথাযথ জৈব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, শিল্পোদ্যোগকে উৎসাহিত করতে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে এলাকার মানুষের ক্ষমতায়ন হয়।
ঐতিহ্য, পর্যটন ও সুস্থায়ী ব্যবস্থাপনা:
কেদারনাথ রোপওয়ে প্রকল্প : উত্তরাখন্ডের শোনপ্রয়াগ থেকে কেদারনাথ পর্যন্ত একটি রোপওয়ে প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। পরিকল্পনা, নির্মাণ, অর্থায়ন, পরিচালনা এবং হস্তান্তর (ডিবিএফওটি) উদ্যোগের মাধ্যমে এটি বাস্তবায়িত হবে। যেসমস্ত তীর্থযাত্রী কেদারনাথ দর্শন করেন, তাঁরা এই পরিবেশবান্ধব ও আরামপ্রদ প্রকল্পটির সুবিধা উপভোগ করবেন। পরিবেশবান্ধব এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে যাত্রীরা ৮ থেকে ৯ ঘন্টার পরিবর্তে মাত্র ৩৬ মিনিটে তাঁদের গন্তব্যে পৌঁছে যাবেন।