জানুন কে ছিলেন বিপিনচন্দ্র পাল, ভারত স্বাধীনতায় তার অবদান কি?

ডেস্ক: আজ আমরা যে স্বাধীন ভারতবর্ষে বসবাস করছি সেই ভারতবর্ষের পেছনে লুকিয়ে আছে অনেক বড় অতীত, রয়েছে অনেক বিপ্লবী দের অবদান।

তেমনই একজন বিপ্লবী হলেন বিপিনচন্দ্র পাল। যাঁকে ভারতীয় বিপ্লবের চিন্তাধারার জনক বলা হয়। আজ তাঁর ৮৯ বছর মৃত্যুবার্ষিকী।

বিপিনচন্দ্র পাল ছিলেন একজন প্রখ্যাত বাঙালি বিপ্লবী, রাজনীতিবিদ সাংবাদিক ও লেখক।
সাথে তিঁনি একজন সুবক্তা ও। তাঁর আহ্বানে দেশের হাজার হাজার যুবক স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

জন্ম ও পরিচিতি-
বিপিনচন্দ্র পাল ৭ই নভেম্বর ১৮৫৮ সালে বাংলাদেশের সিলেট জেলার পলি গ্রামে এক ধনী কায়স্থ পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতা রামচন্দ্র পাল ছিলেন একজন গ্রাম্য জমিদার এবং সিলেট বারের প্রভাবশালী সদস্য।

শিক্ষা ও কর্ম জীবন –

বিপিন চন্দ্র পাল সিলেট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিদ্যালয় জীবনের শিক্ষা লাভ করেন। পরবর্তী কালে কলকাতার প্রসিডেন্সী কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু পড়াশোনার মাঝখানে মাঝখানেই তিঁনি কলেজে ছেড়ে দেন।
১৮৭৯ সালে চাকুরি জীবন শুরু করেন একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে। ১৮৯০ – ১৮৯১ পর্যন্ত তিনি কলকাতা পাবলিক লাইব্রেরীর সম্পাদক এবং লাইব্রেরিয়ান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সেখানে তিঁনি কেশব চন্দ্র সেন, শিবনাথ শাস্ত্রী, এসএন ব্যানার্জি এবং এবং বিজয় কৃষ্ণ গোস্বামী এর মতো অনেক রাজনৈতিক নেতাদের সংস্পর্শ আসেন। এবং সেখান থেকেই তিঁনি রাজনৈতিক দিকে প্রভাবিত হন। এরপরে তিঁনি ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণ করেন।

১৮৯৮ সালে কম্পারেটিভ ইডিওলজি (comparative ideology) নিয়ে পড়াশোনা করার জন্য ইংল্যান্ডে গিয়েছিলেন। তাঁর পর এক বছরের ব্যবধানে তিনি ভারতে ফিরে আসেন এবং তখন থেকেই তিনি স্থানীয় ভারতীয়দের মধ্যে স্বরাজের ধারণা প্রচার শুরু করেন। তিঁনি জনগণের মধ্যে সামাজিক সচেতনতা এবং জাতীয়তাবাদ জাগানোর জন্য বেশ কয়েকটি নিবন্ধ ও লিখেছিলেন।
বিপিন চন্দ্র পাল তাঁর সাংবাদিকতার পেশা দেশপ্রেমিক সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়ার কাজে ব্যবহার করেছিলেন।
স্বরাজ প্রচারের জন্য তিঁনি বেশ কয়েকটি জার্নাল, ম্যাগাজিন এবং বই প্রকাশ করেছিলেন।

তাঁর বিশিষ্ট বইগুলির মধ্যে রয়েছে ‘ন্যাশনালিটি এন্ড এম্পায়ার’, ‘ইন্ডিয়ান ন্যাশনালিজম ’, ‘স্বরাজ এন্ড প্রেসেন্ট সিচুয়েশন ’, ‘দ্যা সোল্ অফ ইন্ডিয়া’, ‘দ্যা বেসিস অফ সোশ্যাল রিফর্ম ’, ‘দ্যা হিন্দুইজম’ এবং ‘দ্য নিউ স্পিরিট’ তিনি ‘ডেমোক্র্যাট’, ‘ইন্ডিপেন্ডেন্ট’ এবং এছাড়া আরও অনেক জার্নালের সম্পাদক ছিলেন। তিঁনি ‘পরিদর্শক’, ‘নিউ ইন্ডিয়া’, ‘বন্দে মাতরম’ ও ‘স্বরাজ’ এর মতো জার্নালের ও প্রকাশনা করেছিলেন।

তিঁনি কলকাতা বেঙ্গল পাবলিক ওপিনিয়নের সম্পাদক ও ছিল।
১৮৮৭ সাল থেকে ১৮৮৮ সালে লাহোর থেকে ট্রাইবুনের সম্পাদক ছিলেন। এছাড়া বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানেও তিনি সম্পাদক হিসাবে কাজ করেছিলেন।

সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জীর প্রভাবে বিপিনচন্দ্র সক্রিয় রাজনীতিতে প্রবেশ করেন।
বাল গঙ্গাধর তিলক, লালা লাজপত রায় এবং অরবিন্দ ঘোষের বুদ্ধিতে ক্রমে তিঁনি চরমপন্থি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। যদিও তিঁনি বাল গঙ্গাধর তিলকের হিন্দু জাতীয়তাবাদ এর পক্ষপাতি ছিলেন না।

১৯০৬ সালে তিঁনি বন্দেমাতরম পত্রিকা প্রকাশ করেন। ১৯০৮ এ ইংল্যান্ডে গিয়ে তিঁনি ‘স্বরাজ’ নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা করেন। ১৯২১ সালে অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচীতে মহাত্মা গান্ধীর সাথে মতে মিল না হওয়ায় তিঁনি রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ান।

আন্দোলন –

বিপিনচন্দ্র পাল বঙ্গভঙ্গ, বিপ্লবী আন্দোলন, দিল্লী-লাহোর ষড়যন্ত্র ,দি ইন্ডিয়ান সোসিওলজিস্ট,সিঙ্গাপুর বিদ্রোহ, হিন্দু-জার্মান ষড়যন্ত্র, চম্পারণ ও খেদা সত্যাগ্রহ, রাউলাট কমিটি এবং আইন ,জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড অসহযোগ আন্দোলন সহ বহু আন্দোলন অংশগ্রহন করেন।

সংগঠন –

ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস,সারা ভারত কিশান সভা, নিখিল ভারত, মুসলিম লীগ, অনুশীলন সমিতি, আর্য সমাজ, আজাদ হিন্দবার্লিন কমিটি, সোশ্যালিস্ট রিপাবলিকান অ্যাসোশিয়েশন, ইন্ডিয়া হাউসভারতীয় হোম রুল এর মতো বহু সংগঠনের সাথে জড়িত হন।

প্রয়াত –

জীবনের শেষ বছরগুলিতে বিপিন চন্দ্র পাল নিজেকে কংগ্রেস থেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছিলেন এবং একাকী জীবন যাপন করেছিলেন।
১৯২৩ সালের ২০ শে মে তিঁনি মারা যান। মৃত্যুর পরেও বিপিন চন্দ্র পাল জীবনী দেশের যুবসমাজকে অনুপ্রাণিত করে চলেছে এবং তাদের পক্ষে তিঁনি জাতির জন্য যে মহান ত্যাগ করেছেন তা চির স্মরণীয় ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *