একজন সৈনিক হিসাবে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কি ছিল তাঁর অবদান? জেনে নিন, নজরুল ইসলামের অজানা তথ্য

ডেস্ক: গোটা দেশজুড়ে বিপ্লবের সময় বাঙালি সাহিত্যিকরা হাতে পেন তুলে নিজেদের সাহিত্যের মাধ্যমে করেছিলেন বিপ্লব।কবি কাজী নজরুল ইসলাম নিজের লেখনীর মাধ্যমে বিংশ শতাব্দীতে করেছিলেন বিপ্লব। তার অন্যতম পরিচয় বিদ্রোহী কবি হিসেবে।

কাজী নজরুল ইসলাম আসানসোল জেলার চুরুলিয়া গ্রামে ২৪ শে মে ১৮৯৯ সালে এক মুসলিম দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা ফকির আহমেদ ও মাতা জাহেদা খাতুন। পিতা ছিলেন স্থানীয় এক মসজিদের ইমাম।

একটু বড় হবার পর কবি স্থানীয় এক মসজিদে ধর্মীয় লেখাপড়া শুরু করেন। মাত্র ৯ বছর বয়সে তিনি পৃতাহারা হন। ফলে তাঁর পিতা যেই মসজিদের ইমাম ছিলেন সেখানের দায়ভার তাঁর ওপর তুলে দেয়া হয়। তিনি সংসারে সাথে সাথে গ্রামীণ নাট্যদলে কাজ করার সময় কবিতা, নাটক এবং সাহিত্য সম্পর্কে জ্ঞ্যান অর্জন করেছিলেন।
হাজার ১৯১৭ সালে ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান আর্মি তে যোগদান করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন তিনি আর্মি তেই ছিলেন। পরবর্তীকালে কলকাতার একটি সংস্থায় সাংবাদিক হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেন। এবং বিদ্রোহী লেখনীর মাধ্যমে তখনকার ইংরেজ শাসন কে কটাক্ষ করেছিলেন। সেখান থেকেই তার সাহিত্যের পথে এগিয়ে চলা বহু কবিতা, উপন্যাস, নাটক, সঙ্গীত লিখেছিলেন। এছাড়াও তিনি একজন দার্শনিক যিনি বাংলা কাব্যে অন্যতম ভূমিকা রেখেছিলেন।

তিনি ভারত-বাংলাদেশ দুই বাংলাতেই তার কবিতা ও গান দিয়ে সেখানে মানুষের মন জয় করেছিলেন। তার কবিতায় বিদ্রোহী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তাকে বিদ্রোহী কবি নামে নামাঙ্কিত করা হয়। তাঁর কবিতা ও গানের মূল বিষয়বস্তু গুলি তখনকার মানুষের উপর অত্যাচার সামাজিক অনাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ছিল। তিনি প্রকাশ করেন ‘বিদ্রোহী’ এবং ‘ভাঙার গান’ এর মত কবিতা ‘ধূমকেতু’র মতো সাময়িক।

তাঁর এই লেখনী কারণে তাকে কারারুদ্ধ করা হয় তিনি জেলে থাকাকালীন লেখেন ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’। তাঁর সাহিত্যকর্মের প্রাধান্য পেয়েছিল ভালোবাসা, মুক্তি এবং বিদ্রোহ। ধর্মীয় লিঙ্গভেদের বিরুদ্ধেও তিনি লিখেছিলেন। ছোটগল্প, উপন্যাস, নাটক লিখেও তিনি মূলত কবি হিসেবেই বেশি পরিচিত। বাংলা কাব্যে তিনি এক নতুন ধারার জন্ম দেন। ধার্মিক মুসলিম সমাজ এবং অবহেলিত ভারতীয় জনগণের মধ্যে তাঁর বিশেষ সম্পর্ক ছিল। তিনি প্রায় ৩০০০ এর বেশি গান রচনা করেন।অধিকাংশ সুরারোপ করেছেন তিনি নিজেই করেছেন। যেগুলি ‘নজরুল গীতি’ নামে পরিচিত এবং জনপ্রিয়। তাঁর লেখনীর মধ্যে গজল ও শ্যামা সংগীত দুটোই ছিল।

১৯৪২ সালে তিনি অজানা এক রোগে আক্রান্ত হন। যার ফলে তিনি তাঁর আওয়াজ ও স্মৃতিশক্তি হারাতে শুরু করেন। পরে পরীক্ষা করে দেখা গেলে সেটি পিক্স ডিজিজ বলে জানা যায়। বহু বছর তিনি ঝাড়খন্ডের রাঁচি হসপিটালেও ভর্তি ছিলেন।

তাঁর অবস্থার পর বাংলাদেশি সরকার তাঁকে নিজ দেশে বসবাস করার আমন্ত্রণ জানান। নজরুল ইসলাম তাঁর পরিবারকে নিয়ে ১৯৭২ সালে ঢাকাতে বসবাস শুরু করেন। তিনি সেখানে বাংলাদেশি নাগরিকত্বের সম্মানে সম্মানিত হন। এবং এই মহান কবি দুর্ভাগ্যবশত বাংলাদেশে যাওয়ার চার বছর পর ১৯৭৬ সালের ২৯ শে আগস্ট সেখানেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *