চেপে ধরা হলো বাচ্চাদের মুখ, প্রাণ বাঁচাতে একসাথে 16 জন লুকিয়ে শৌচালয়
ডেস্ক: পরিস্থিতিটা ঠিক একটি মধ্যবর্তী লাইনের মতো, যেই লাইনটির একদিকে জীবন এবং অন্যদিকে মৃত্যু। আর ঠিক এই লাইনের মতোই পরিস্থিতি আফগান বাসীদের। প্রতিমুহূর্তে লেগে রয়েছে প্রাণের ভয়।
আফগান সেনা বা মার্কিন বাহিনীকে যারা সহায়তা করেছিল, তাদের আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছে তালেবানরা। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আত্মসমর্পণ না করলে গোটা পরিবারকে খতম করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে। রেহাই পাচ্ছেনা সাংবাদিকরাও। মুখে শান্তির বার্তা ও সকলকে ক্ষমা করে দেওয়ার কথা বললেও ইতিমধ্যে বাড়ি বাড়ি ঘুরে তালিবানরা।
এমনই এক প্রবাসী পরিবারের বাড়ির কড়া নাড়তে থাকে তালিবানরা। তারা ভয়ে নিভিয়ে দেয় বাড়ির সমস্ত আলো, সুইচ অফ করে দেয় মোবাইল ফোন ও, প্রাণ বাঁচাতে পরিবারের 16 জন সদস্যই আশ্রয় নেন একটি ছোট বাথরুমে। বাচ্চারা যাতে কেঁদে না ওঠে তার জন্য তাদের মুখ চাপা দিয়ে রাখা হয়েছিল দীর্ঘ সময় ধরে। আগে পরিবারের দুই সদস্যকে তারা হারায় আফগান যুদ্ধে। এরপরে ভয়ংকরভাবে প্রাণভয় ছিল তাদের। তালিবানের দরজা ধাক্কানো বন্ধ হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরেও লুকিয়ে থেকে প্রাণে বেঁচেছেন পরিবারের সদস্যরা।
এক প্রবাসী ব্যক্তি বলেন, “আমার গোটা পরিবার আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। রাস্তা থেকে কোনো গাড়ির যাওয়ার আওয়াজ পেলেই সকলের শৌচালয় ছুটছে আশ্রয় নিতে। খাবারও অত্যন্ত সীমিত রয়েছে। শহর তালিবানের দখলে চলে যাওয়ার পর থেকেই খাবারের দামও ব্যাপক হারে বেড়েছে। সব মিলিয়ে গোটা পরিবারের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়।” তিনি আরো জানান, তার পরিবারকে কাবুল থেকে বের করে আনার প্রাণপণ চেষ্টা করছেন তিনি। ইতিমধ্যে একাধিক দেশের ভিসার জন্য আবেদন করে ফেলেছেন।
একের পর এক ঘটনা সামনে আসতেই আতঙ্কে রাত কাটাচ্ছেন আফগানিস্থান বাসিন্দারা। গতকালই একজন সাংবাদিকের খোঁজে তার বাড়িতে হাজির হয় তালিবানরা। সাংবাদিককে না পেয়ে তারই আত্মীয় কে গুলি করে খুন করে।
ক্ষমতা দখলের পরই তালিবানরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে, “শহরে রক্ত ঝরতে দেওয়া হবে না। সকলকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে। শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরই তাদের একমাত্র লক্ষ্য। বাসিন্দাদের আতঙ্কিত হওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই। কাউকে বাড়ি ছেড়ে যেতে হবে না।” কিন্তু বাস্তবে এর বিপরীত দৃশ্যই চোখে পড়ছে। শুক্রবার থেকে ভাইরাল হওয়া একাধিক ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, বাড়ি গিয়ে কড়া নাড়ছে তালিবানরা। প্রশ্নের সঠিক উত্তর না মিললেই রাস্তায় নামিয়ে চাবুকের আঘাত করা হচ্ছে।
প্রাক্তন সরকারি কর্মচারী থেকে শুরু করে সেনাবাহিনীর জওয়ান, সমাজকর্মী, সাংবাদিক কেউ বাদ যাচ্ছেন না। শরিয়া আইন মেনে মহিলাদের চাকরি স্বাধীনতার কথা বলা হলেও কাজে যোগ দিতে গেলে বাড়ি ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে মহিলা কর্মীদের। এই ঘটনার শিকার হন শবনম নামক একজন সংবাদ পাঠিকা। যিনি অফিস গেলে তাকে বলা হয়, “সরকার বদলেছে, তোমার আর প্রয়োজন নেই। বাড়ি যাও।”