সাইকেল-এ করে কেদারনাথ যাত্রা
ডেস্ক: ছোট থেকেই শিবের ভক্ত চুঁচুড়ার কামারপাড়ার শুভ দাস। ছোটবেলায় বন্ধুদের সঙ্গে জল ঢালতে একবার তারকেশ্বর মন্দিরেও গিয়েছিলেন। সেখান থেকেই তাঁর মহাদেবের প্রতি ভক্তি বাড়ে। ইচ্ছে ছিল কেদারনাথ শৈবতীর্থে পৌঁছে সেখানে গিয়ে শিবের মাথায় জল ঢেলে আসবেন। তবে আর্থিক প্রতিকূলতা তাঁর কাছে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
টালির চালের ঘরে জল পড়ে, পলিথিন টাঙানো ঘরে দারিদ্র্যের ছাপ স্পষ্ট। সকাল-বিকেল চায়ের দোকান চালিয়ে যতটুকু উপার্জন হয়, তা থেকেই কিছুটা সঞ্চয় করে, কিছুটা ঋণ নিয়ে কেদারনাথের উদ্দেশ্যে রওনা হন বছর বাইশের শুভ। গত ১৪ এপ্রিল একটি সাইকেল কিনে তাতে চেপে শুভ রওনা দেন কেদারনাথের উদ্দেশ্যে। দীর্ঘ পথে নানা বিপত্তির মুখোমুখি হতে হয় তাঁকে। কখনও রাত কাটাতে হয়েছে ফাঁকা রাস্তায়, কখনও মন্দিরে। কখনও কোনও সহৃদয় মানুষ জায়গা
দিয়েছেন নিজের বাড়িতে। এই ভাবে ঘরের ও পথের নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে অবশেষে মহাদেবের ভক্ত শুভ পৌঁছে যান কেদারনাথ মন্দিরে। এ-যাত্রা এমনিতেও মোটেই সহজ ছিল না। তবে চলার পথের সমস্ত চড়াই-উতরাই সাফল্যের সঙ্গে পেরিয়ে কেদারনাথ যাত্রা সমাধা করে বাড়ি ফিরেছেন শুভ। শুভর মা প্রতিমা দাস বলেন, ছোট থেকে শিবভক্ত ছেলে। কয়েক মাস আগে জন্ডিস হয়েছিল। তখন থেকেই ওর কেদারনাথ যাওয়ার জেদ চাপে। আমরা খুব দুশ্চিন্তায় ছিলাম, এতটা রাস্তা একা সাইকেল নিয়ে যাবে? তবে মহাদেবের কৃপায় ভালোভাবে ফিরে এসেছে।
২৬ দিন সাইকেল চালিয়ে প্রায় ১৫৬৬ কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করে কেদার পৌঁছেছিলেন তিনি। চুঁচুড়া থেকে গঙ্গার জল নিয়ে জল ঢালার জন্য যাত্রা শুরু করেছিলেন। যাত্রা সম্পন্ন করে আবারও গৌরীকুণ্ড থেকে জল নিয়ে এসে চুঁচুড়ার ষণ্ডেশ্বরতলা মন্দিরে পুজো দিয়ে যাত্রা সম্পন্ন করেন।
কামারপাড়ায় টালির চালের বাড়ি, সেখানেই মা-বাবাকে নিয়ে ছোট্ট সংসার। দু’বছর আগেই লোন নিয়ে নিজের দোকান চালু করেছেন শুভ। চুঁচুড়া ষণ্ডেশ্বরতলা মন্দিরের পাশেই ছোট্ট ঠেলাগাড়ির দোকানে চা-বিস্কুট চিপস বিক্রি করে অল্প অল্প করে টাকা জমিয়েছিলেন। সাইকেল যাত্রার ২৬ দিনের মাথায় পৌঁছেছিলেন কেদারনাথ মন্দিরে। বাড়ি ফেরার পর ফিরেছেন কাজেও। তবে মহাদেবের ডাক ভিতরে অনুভব করলেই আবারও বেরিয়ে পড়বেন নতুন তীর্থযাত্রায়–এই তাঁর মনোভাব।