লাগানো হলো মৃত ছেলের কালো হাত ফর্সা মেয়ের অঙ্গে, অঙ্গ প্রতিস্থাপনের আরো একটি জয়গাঁথা

ডেস্ক: ২০১৬ র সেপ্টেম্বর মাসে শ্রেয়া বলে একটি তরুণী তার বাড়ি পুনে থেকে কলেজ কর্ণাটকের মণিপাল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে ফেরার সময়ে এক ভয়াবহ বাস দুর্ঘটনার শিকার হয়।
প্রাণে বেঁচে গেলেও হারাতে হয় তার দুটো হাতকে।কুনুই এর নিচ থেকে কেটে বাদ দিতে হয় দুটো হাতই। এক বছর পরে কেরালার অমৃত ইনস্টিটিউট এ নাম দাখিল করে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গোটা এশিয়াতে এই ধরণের অঙ্গ প্রতিস্থাপনের কোনো প্রতিষ্ঠান আর নেই।

অবশেষে ২০১৭র অগাস্ট মাসে সৌভাগ্যবতী মেয়েটি তার প্রতিস্থাপনের যোগ্য দাতা পেয়েছিল । কেরালার এর্নাকুলামের সচিন বলে একটি প্রায় একই বয়েসের বাণিজ্য শাখার স্নাতক স্তরের ছাত্র মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় মারা যায় মানে মস্তিষ্কের মৃত্যু হয়।এই ছেলেটির পরিবার তার হাত দান করে।অতঃপর সেই হাত প্রতিস্থাপিত হয় এই ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্রীর দেহে।

এখনো অতি দুরহ এই ধরণের প্রতিস্থাপনের কাজে মিলিত ভাবে কাজ করেন ২০ জন শল্য চিকিৎসক এবং ১৬ জন চেতনানাশক বিশেষজ্ঞ বা এনেস্থেটিক এর দল!ডক্টর সুব্রামানিয়াম ,যিনি এই প্লাস্টিক এবং প্রতিস্থাপন বিভাগের প্রধান বলেছিলেন , “এটি অতীব কঠিন ধরনের কাজ কারণ দাতা আর গ্রহীতার অঙ্গের পেশী , রক্তজালিকা থেকে শিরা উপশিরা বা এই সার্বিক খাপ খাওয়ানোর কাজ অতি সময় সাপেক্ষ এবং মিলিয়ে করার। বড্ড কঠিন বিষয়। ” যাই হোক তাঁরা সফল হয়েছিলেন !

চমক এসেছে অন্য জায়গায়। প্রথমত প্রতিস্থাপিত এই হাত গুলো একটি ছেলের আর গ্রহীতা ছিল একটি মেয়ে। এরপরেও কাজ করার শুরু হতে ধীরে ধীরে মেয়েটির মা খেয়াল করেন, ক্রমশঃ মেয়েটির হাতের প্রতিস্থাপিত অংশ মেয়েদের ধাঁচের হয়ে যাচ্ছে।একই সাথে ওই দাতা ছেলেটির গায়ের রং কালো হওয়ার কারণে মেলানিন বেশি ছিল ওই হাতে। তাতে শ্রেয়ার কোনো অসুবিধে ছিল না কারণ তার কাছে ওটা অকল্পনীয়। বিস্ময়ের বিষয় হলো এরপরে মানে ধীরে ধীরে ওই প্রতিস্থাপিত হাত দুটোর উপরিভাগের চামড়া ও পরিবর্তিত হতে থাকে মেয়েটির শরীরের অন্য অংশের রঙের সাথে।এখন যদি দেখা যায়, তবে তা প্রায় বলা অসম্ভব যে ওটি কোনো আলাদা মানুষের হাতের প্রতিস্থাপন হয়েছে।

এই অপারেশনের পরের তিন থেকে চার মাসে এই পরিবর্তন আসা শুরু হয়। সম্পর্কিত চিকিৎসকরা বা বিশেষজ্ঞরা ও চমকিত। তাদের কাছে এই বিষয়টি অতীব নতুন কারণ এক তো এই ধরণের ভিন্ন লিঙ্গের মানুষের অঙ্গ প্রতিস্থাপন আগে হয় নি আর পুরো প্রতিস্থাপনের বিষয়টিই অতীব কম হয়ে থাকে। ক্রমশঃ হাতের কব্জি মেয়েলি ধাঁচের হয় আর আঙ্গুল ও পরিবর্তিত হতে থাকে, প্রাসঙ্গিক ছবি দেখলে বিষয়টি আরো ভালো ভাবে বুঝতে পারবেন।

যাই হোক এর কারণ সঠিক জানা না গেলেও অমৃতা ইনস্টিটিউট এর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে মূলত মেয়েলি হরমোন এর একটি কারণ হতে পারে। একই কথা বলেছে আরো এক শল্য চিকিৎসক এবং বিশেষজ্ঞ ডক্টর এস.ডি.গানগানে। ত্বকের বিষয়ে বিশেষজ্ঞ মানে ডার্মাটোলজিস্ট উদয় কোপকার বলেছেন এই ধরণের ত্বকের রং পরিবর্তন অতীব দুর্লভ একটি অভিজ্ঞতা।আরো গবেষণা না করলে আমাদের পক্ষে এখনই বলা সম্ভব না এই ঘটনা কেন হলো।আমাদের এই প্রতিস্থাপিত অঙ্গের বিষয়ে জ্ঞান অতি সীমিত কারন এখনো পর্যন্ত এই ২৫ বছরে মাত্র ১০০ টি এই ধরণের কাজ হয়েছে।আরো যা বিরল তা হলো এই ধরণের প্রতিস্থাপন তাই আমাদের আরো একটু অপেক্ষা করতেই হবে।

মেয়েটি সেই সময়ে তার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিল বটে তবে আজ সে আবার নতুন করে জীবন শুরু করেছে।অর্থনীতি নিয়ে তার স্নাতক স্তরের পড়াশোনা বা পরীক্ষা দিয়েছে সে, হ্যা নিজের হাত দিয়েই দিয়েছে!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *