ছিল ১০, এখন ২৪ ভবিষতে ২৫ ঘন্টায় একদিন হতে পারে পৃথিবীতে !

ডেস্ক: সোজাসাপটা ২৪ ঘণ্টার হিসেব ধরলেও, আসলে ২৩ ঘণ্টা ৫৬ মিনিট ৪ সেকেন্ডে একদিন হয়। নিজের অক্ষের উপর একবার পাক খেতে এতটাই সময় লাগে পৃথিবীর। সেই নিরিখেই দিনের এই হিসেব। বিজ্ঞানীদের মতে, হিসেবে হেরফেরই হয়েছে। কারণ কোটি কোটি বছর ধরে পৃথিবীর গতিবেগে পরিবর্তন ঘটেছে বলে মত তাঁদের।

MIT-র অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর সারা মিলহল্য়ান্ড জানিয়েছেন,পৃথিবীর ঘূর্ণনগতি চিরকাল একই ছিল না। বহু বছর আগে গতি যেমন বেশি ছিল, সেই নিরিখে দিনের দৈর্ঘ্যও অনেক কম ছিল।ক্যালটেকের গ্রহবিজ্ঞানের অধ্যাপক কনস্ট্যানটিন বেটিজিন জানিয়েছেন, পৃথিবীর ঘূর্ণনের গতি একসময় এত বেশি ছিল যে দিনের দৈর্ঘ্য ছিল ১০ ঘণ্টা। অর্থাৎ নিজের অক্ষের উপর একবার পাক খেতে ১০ ঘণ্টা সময় নিত পৃথিবী।

শুধু তাই নয়, পৃথিবীর ওই তীব্র ঘূর্ণন থেকেই চাঁদের সৃষ্টি বলে মত কনস্ট্যানটিনের। তাঁর দাবি, ওই তীব্র গতির জেরেই পৃথিবীর থেকে কিছু অংশ ছিটকে বেরিয়ে যায়, যা থেকে চাঁদের সৃষ্টি। চাঁদের অভিকর্ষ বেলর প্রভাবেই পৃথিবীতে জোয়ার-ভাঁটা হয় এবং তার জেরেই পৃথিবী শ্লথ হয়ে গিয়েছে বলে মত কনস্ট্যানটিনের।
এমনকি ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় নিয়েও একসময় পৃথিবী নিজের অক্ষের উপর পাক খেত বলেও মত বিজ্ঞানীদের একাংশের। মিলহল্যান্ডের মতে, কিছু সেকেন্ডেরই হয়ত ফারাক ছিল। কিন্তু তার ফলেই পৃথিবীর অন্তঃস্থল, সাগর-মহাসাগর এবং বায়ুমণ্ডলের পরিবর্তন ঘটেছে।

মিলহল্যান্ডের মতে, গ্রহের সৃষ্টির মধ্যেই তার ঘূর্ণনের তত্ত্ব লুকিয়ে রয়েছে। ধুলো, পাথর এবং গ্যাস একত্রিত হয়ে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে চলে। কত জোরে এই উপাদানগুলি পরস্পরের সঙ্গ একত্রিত হয়েছে, তার উপরই গ্রহের গতি নির্ভর করে।
এ ব্যাপারে বোতলের উদাহরণ দিয়েছেন মিলহল্যান্ড। তিনি জানিয়েছেন, বোতলকে আড়াআড়ি শুইয়ে চাপ দিলে সেটি ঘুরতে থাকে। যত জোরে চাপ দেওয়া হয়, তত জোরে ঘুরতে থাকে। পৃথিবীর ক্ষেত্রেও এই তত্ত্ব কার্যকর।
পৃথিবী যদি সূর্যের আরও কাছে অবস্থিত হতো, সেক্ষেত্রে চাঁদের মতো, সূর্যের সঙ্গে পৃথিবীরও জোয়ার-ভাঁটার সম্পর্ক হতো বলে মত বিজ্ঞানীদের। সেক্ষেত্রে গ্রহের আহ্নিক গতি এবং বার্ষিক গতির মধ্যে তেমন ফারাক থাকত না। সৌরজগতের বাইরে অবস্থিত গ্রহগুলির ক্ষেত্রে এমনটাই লক্ষ্য করা গিয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

তবে এই মুহূর্তেও পৃথিবীর আহ্নিক গতিতে সদা পরিবর্তন ঘটে চলেছে বলে মত বিজ্ঞানীদের। প্রতি শতকে ১.৭ মিলি সেকেন্ড করে পৃথিবী শ্লথ হয়ে পড়ছে বলে জানিয়েছেন কনস্ট্যানটিনের। চাঁদের অভিকর্ষ টানের প্রভাবে জোয়ার-ভাঁটার যে টানাপোড়েন, তাকেই এর জন্য দায়ী করেছেন তিনি। তবে পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব একটু একটু করে বাড়ছে। আগামী ২০ কোটি বছরে পৃথিবীতে ২৫ ঘণ্টায় একদিন হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।