অন্তর্বর্তী জামিন পেয়ে ছাড় পেয়েছে নারদা কান্ডে অভিযুক্তরা, নারদা স্টিং অপারেশনের বিস্তারিত তথ্য

ডেস্ক: পাঁচ বছর পুরনো নারদা মামলায় নতুন করে তৎপর হয়ে সিবিআই সোমবার সকালবেলা তৃণমূলের ৪ অভিযুক্ত নেতাকে নাটকীয় ভাবে গ্রেফতার করে।

রাজ্যে পুরো প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম, মন্ত্রী সুব্রত মুখার্জি, বিধায়ক মদন মিত্র ও প্রাক্তন মন্ত্রী শোভন চ্যাটার্জি কে বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে নিজাম প্যালেসে নিয়ে আসে সিবিআই। আচমকা গ্রেফতারের প্রতিবাদে নিজাম প্যালেসে গিয়ে হাজির হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেখানে গিয়ে নিজের গ্রেপ্তারের দাবিও জানান তিনি।

এই নারদা মামলার সূত্রপাত কোথায় থেকে সে বিষয়টি শুরু থেকে জানা যাক-

২০১৪ সালে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও রাজ্যের নেতাদের মনোভাব জানার জন্য ম্যাথু স্যামুয়েল একটি বন্ধুকে নিয়ে স্টিং অপারেশন চালানোর ভুয়ো আধার কার্ড তৈরি করে জন্য কলকাতা আসেন। এবং যেমন ভাবনা তেমন কাজ সেই বছরই তিনি সেই স্টিং অপারেশন করেন।

 

পরবর্তী দু’বছর বিষয়টি চেপে রাখেন তিনি. ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনের আগেই, সেই অপারেশনের ৫২ মিনিটের ফুটেজটি ভাইরাল করেন ম্যাথু স্যামুয়েল। যেখানে দেখা যায় প্রথম সারির নেতা মন্ত্রীরা নির্দ্বিধায় নিচ্ছেন ঘুষের টাকা। ভিডিওটির সত্যতা কতটা সেটা নিয়ে প্রশ্ন তোলে তৃণমূল।

 

ভিডিওটিতে যাদের দেখা গিয়েছিল তারা প্রত্যেকেই তৃণমূলের বিশিষ্ট নেতাবৃন্দ যেখানে উপস্থিত ছিল মুকুল রায়, সুলতান আহমেদ, সৌগত রায়, শুভেন্দু অধিকারী, ইকবাল আহমেদ, ফিরহাদ হাকিম, শোভন চট্টোপাধ্যায়, অরুপা পোদ্দার, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, পুলিশ আধিকারিক এমএইচ আহমেদ মির্জা, কাকলি ঘোষ দস্তিদার, মদন মিত্র।

 

২০১৬ এ ভিডিওটি জনসম্মুখে আসার পর তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে রাজ্যের বিরোধীদল ইস্তফা দেওয়ার দাবি করে। নারদ কান্ডে উত্তাল হয়ে ওঠে সংসদ। লোকসভায় বিরোধীদলের প্রবল চাপে নারদ এথিক্স কমিটির কাছে পাঠান স্পিকার সুমিত্রা মহাজন।

 

সে বছরই বহু চাপের সম্মুখে পড়ে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে তৃণমূল। নারদা কান্ডে দলীয় তদন্ত ঘোষণা করেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। নেতাদের ক্লিন চেটো দিয়ে দেন মমতা। এই ঘটনার পর তৃণমূলের 5 সাংসদকে নোটিশ ধারায় লোকসভার এথিক্স কমিটি। ফুটেজ নিজেদের হেফাজতে নিতে কলকাতা হাইকোর্ট তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে এবং স্টিং অপারেশনের অভিযুক্তদের টাকা নেওয়ার ভিডিও সম্পর্কে সাংসদের কাছে ব্যাখ্যা করার জন্য ডাকা হয়।

 

অন্যদিকে ম্যাথু স্যামুয়েলের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ শুরু করে পুলিশ । ভিডিওটিতে মুকুল রায়কে আইপিএস মির্জার হাতে টাকা দেওয়ার কথা বলতে শোনা যায়, তাই মির্জাকে বারবার ডাকা হয় জেরার জন্য ।

 

২০১৭ শুরুর দিকটায় বিষয়টিতে গুরুত্ব অনেকটা কমে গেছিল। কিন্তু মার্চ থেকে নারদা স্টিং অপারেশন মামলায় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই কে প্রাথমিক তদন্তের ভার দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। এবং মামলায় যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে সিবিআইকে এফআইআর দায়ের করার নির্দেশ দেওয়া হয়।

 

ফলে সিবিআই দন্ডবিধির ১২০বি ধারায় অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের অভিযোগে নারদ কান্ডে ১৩ জন প্রভাবশালী নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে নিজাম প্যালেসের ক্রাইম ব্রাঞ্চে।

 

২০১৭র এর মধ্যবর্তী সময়ে সিবিআই ও ইডি দফতরে একের পর এক ডেকে পাঠানো হয় প্রতিটি অভিযুক্তকে। শোভন চট্টোপাধ্যায় ও প্রসূন ব্যানার্জি কেও জেরা করা হয়।

 

২০১৮ তে বিষয়টিকে আরও খতিয়ে দেখার জন্য ক্যালিফোর্নিয়ার সিবিআই গোয়েন্দাদের নিয়োগ করা হয়।

 

২০১৯ এ ফের মুকুল রায় কে জেরা করে সিবিআই। ফের ডাক পড়ে শোভন, অপরূপা, এসএমএইচ মির্জার। সেপ্টেম্বরে নারদা কান্ডে প্রথম গ্রেফতার করা হয় আইপিএস এসএমএস মির্জাকে।

 

২০২১ এ জানুয়ারিতে একাধিক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করতে চেয়ে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় কে চিঠি দেয় সিবিআই।

 

৯ই মে ৪ জন বিশিষ্ট মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করার অনুমতি দেয় রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়।

 

১৭ ই মে সোমবার সকালে রাজ্যের পরিবহনমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের বাড়িতে যান সিবিআই আধিকারিকরা। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, মদন মিত্র ও শোভন চ্যাটার্জি কেও সিজিও কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হয় পরে তাদের গ্রেফতার করা হয় খবর পেয়ে ছুটে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

 

সিবিআই এই ৪ জন ধৃতকে ১৪ দিনের জন্য রিমান্ডে নেওয়ার আর্জি জানিয়েছিল হাইকোর্টে। কিন্তু হাইকোর্ট থেকে অন্তর্বর্তী জামিন পেয়ে বর্তমানে তারা ছাড় পেয়েছে ।

 

 

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *