মালদা: স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকা সত্ত্বেও মিলছে না চিকিৎসা সুবিধা । তাই দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত অসহায় রোগী স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন জানিয়ে দ্বারস্থ হয়েছে পঞ্চায়েতের কাছে। বিষয়টি জানাজানি হতেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকায়।
এই ঘটনার কথা জানতে পেরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে চাচোল মহকুমা প্রশাসন। দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত ওই রোগীর বাড়ি হরিশ্চন্দ্রপুর থানা বারোডাঙ্গা গ্রামে।
বেসরকারি সমস্ত হাসপাতালে ঘুরে ঘুরে ও চিকিৎসা পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হল দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত পিংকি দাস (২৪)। চিকিৎসা না পেয়ে সপরিবারে স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন করেছেন পিংকি দেবী। এমনই ছবি ধরা পরল হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকার বারোডাঙ্গা গ্রামে।
স্বামীর অত্যাচারের শ্বশুর বাড়ি ছেড়ে দুই সন্তানকে নিয়ে বেশ কয়েক বছর ধরেই রয়েছেন বাবার বাড়িতে। মা পেশায় দিনমজুর এবং বাবা ভ্যান চালক। স্বাস্থ্য সাথী কার্ড থাকা সত্ত্বেও হচ্ছে না অসুস্থ মেয়ের চিকিৎসা। অবশেষে চিকিৎসার জন্য প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছে অসহায় দরিদ্র ওই পরিবার। এমনকি চিকিৎসা না পেলে স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন জানিয়েছে তাঁরা। অসুস্থ মেয়ে এবং অসহায় দরিদ্র মা-বাবা মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও আবেদন জানিয়েছেন প্রশাসনের মাধ্যমে।
উল্লেখ্য, যেখানে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে স্বাস্থ্য সাথী কার্ড থাকলে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ফ্রি তে চিকিৎসার সুযোগ পাওয়া যাবে। সেখানে প্রায় এক মাস ধরে বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালে ঘুরেও মেলেনি চিকিৎসা।
হরিশ্চন্দ্রপুর ১ ব্লকের অন্তর্গত হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত বারোডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা পিংকি দাস (২৪)। প্রায় ১০ বছর আগে পার্শ্ববর্তী তুলসীহাটা গ্রাম পঞ্চায়েতের মিরজাতপুর গ্রামের রঞ্জিত দাসের সঙ্গে বিয়ে হয় তার। ছোট দুই সন্তান রয়েছে। কিন্তু পিংকির অভিযোগ বিয়ের ২ বছর পর থেকেই স্বামী প্রচন্ড অত্যাচার করত। স্বামী ছেড়ে দেওয়ার পরে বাধ্য হয়েই কয়েক বছর ধরে বাবার বাড়িতে চলে আসে সে। পিংকির বাবা দীপক দাস পেশায় ভ্যানচালক। মা লক্ষ্মী দাস দিনমজুর। ভাই বিট্টু দাসও দিনমজুরের কাজ করে।
জানা গিয়েছে, প্রায় এক বছর ধরে অসুস্থ পিংকি। মাথা এবং সারা শরীরে ব্যথা সহ বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে তার। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। স্বাস্থ্য সাথী কার্ড রয়েছে তাদের।কিন্তু একমাস ধরে বিভিন্ন সরকারী এবং বেসরকারী হাসপাতালে ঘুরেও মেলেনি চিকিৎসা। অবশেষে শনিবার হরিশ্চন্দ্রপুর ১ ব্লকের বিডিওর দ্বারস্থ হয় অসহায় এই পরিবার। বাবার ভ্যানে করেই অসুস্থ পিংকিকে নিয়ে যাওয়া হয় ব্লক অফিসে অভিযোগ জানাতে। সেখানে পিংকির মা লক্ষ্মী দাস আবেদন জানান যাতে তার মেয়ের চিকিৎসা হয়। নইলে পরিবারের সকলে স্বেচ্ছামৃত্যুর ব্যবস্থা করে দাও।
পিংকি দাস বলেন,” সারা শরীর এবং মাথায় প্রচন্ড ব্যথা। শরীর জ্বলে যাচ্ছে। আমার স্বামী আমাকে দেখে না। আমার কিছু হয়ে গেলে ছোট দুই সন্তান অনাথ হয়ে যাবে। দরিদ্র বাবা-মায়ের পক্ষে চিকিৎসা করা সম্ভব না। স্বাস্থ্য সাথী কার্ড আছে। কিন্তু চিকিৎসা পাচ্ছি না। মমতা সরকার তো সকলকে ফ্রিতে চিকিৎসা দেয়। আমিও আবেদন জানাচ্ছি যাতে আমি চিকিৎসা পায়।”
পিংকি দাসের মা লক্ষ্মী দাস বলেন,”আমার মেয়েকে ওর শ্বশুর এবং স্বামী দেখেনা।দুই সন্তান নিয়ে আমার বাড়িতেই থাকে।আমার বর ভ্যান চালক। তাতেই আমাদের সংসার চলে। চিকিৎসা করার মত সামর্থ্য নেই। স্বাস্থ্য সাথী কার্ড থাকা সত্ত্বেও চিকিৎসা হচ্ছে না। তাই আজ ব্লকে বিডিওর কাছে অভিযোগ জানাতে এসেছি। প্রশাসন এবং সংবাদ মাধ্যমের দ্বারা মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির কাছে আবেদন জানাচ্ছি যাতে আমার মেয়েটা বাঁচে। সমস্যার সমাধান না হলে আমরা সকলে স্বেচ্ছা মৃত্যুবরণ করবো।”
হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নং ব্লকের বিডিও অনির্বাণ বসু বলেন,”আমরা এই নিয়ে একটা অভিযোগ পত্র পেয়েছি তবে তাতে পরিষ্কারভাবে কিছু নেই।আমাদের বিস্তারিত ভাবে জানতে হবে।প্রশাসন অবশ্যই পাশে দাঁড়াবে।আর যেসব হাসপাতাল স্বাস্থ্যসাথী লিস্ট এর অন্তর্ভুক্ত সেখানে গিয়ে চিকিৎসা না পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।