প্রশ্নের উত্তরে গুলি আসার ভয়কে উপেক্ষা করে তালিবানের চোখে চোখ রেখে সাক্ষাৎকার নিলেন মহিলা সংবাদিক

ডেস্ক: বর্তমানে আতঙ্কের ওপর নাম আফগানিস্তান। তালিবানি আগ্রাসনের শিকার আফগানবাসীরা, বিশেষত্ব আফগানি মহিলারা। আফগানিস্তানের মহিলাদের পরিস্থিতি একটি জলজ্যান্ত বস্তুর থেকে উন্নত কিছু নয়। যেখানে তাদের সামাজিক সমস্ত অধিকার থেকে বঞ্চিত রেখেছে তালিবান সরকার। বেঁচে থাকাটা ও দায় হয়ে পড়েছে মহিলাদের জন্য।

একাধিক ফতোয়া জারি হয়েছে মহিলাদের ওপর। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়েই তালিবানের এক অফিসারের চোখে চোখ রেখে সাক্ষাৎকার করেছেন আফগান সাংবাদিক সাকিনা আমিরি। খাওয়া-পরা জীবনের একমাত্র চাহিদা হতে পারে না। আনন্দ জীবনের লক্ষ্য হওয়া উচিত। টুইটারে এভাবেই মহিলাদের জানার জন্য প্রতিদিন উজ্জীবিত করেন আফগান সাংবাদিক সাকিনা আমিরি। তালিবানি শাসনের বিরুদ্ধে বরাবরই মুখর তিনি। কিন্তু তালিবান আবার ক্ষমতায় আসবে সে কথা ঘুনাক্ষরে ভাবতেও পারেনি সাকিনা।

গত 15 ই আগস্ট তালিবানের কাবুল দখলের পর সাকিনার কেরিয়ারে এমন একটি ঘটনা ঘটে যার কারণে তিনি রাতারাতি লাইমলাইটে চলে আসেন। ‘এটিলাট রোজ’ সংবাদপত্রের সাংবাদিক সাকিনা আমিরি। গত মঙ্গলবার রাস্তায় দাঁড়িয়েই তালিবানের এক শীর্ষ অফিসারের সাক্ষাৎকার নেন তিনি। ওই অফিসারের বাঁদিকে রকেট লঞ্চার ও ডান দিকে AK-47 নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল দুই জঙ্গি। মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে ছিলেন সাকিনা। যেকোনো মুহূর্তে মৃত্যুর সাথে তার পরিচয় করিয়ে দিতে পারত তালিবানরা। নিয়ে নিতে পারত জীবনটা। এবং এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে সাকিনা তাদের প্রশ্ন করেছিলেন, মহিলাদের কাজ করা নিয়ে আপনাদের কি অবস্থান?

এই প্রশ্ন শুনে ওই অফিসারের জবাব, “আপনি যেভাবে পোশাক পরেছেন, এটা আমরা অনুমতি দিচ্ছি না। গোটা শরীর আপনার থাকা উচিত ছিল মুখ যেন না দেখা যায়। আপনার।” সাকিনার পোশাক নিয়ে মন্তব্যে লুকিয়েছিল মহিলাদের নিয়ে তালিবানরা কি ভাবচ্ছে। এর পরেই অফিসার বলেন, “মহিলাদের কাজ করা নিয়ে আমাদের কোনো অসুবিধা নেই। একটাই শর্ত, গোটা শরীর ঢেকে রাখতে হবে।”

এছাড়াও ইসলাম ঘরানোর মহিলাদের পোশাক নিয়ে আরো অনেক ফোতেয়া শুনিয়েছিলেন ওই অফিসার। প্রশ্ন থামাননি সাকিনা ও। আফগানিস্তানের ভবিষ্যত নিয়েও একাধিক প্রশ্ন করেছেন তিনি। সবকিছুর উত্তর মিললেও উত্তর গুলো যেন মুখোশে ঢাকা ছিল। কারণ সেই সময়ই কোন এক প্রান্তে আফগানিস্তানের সংবাদমাধ্যম আরটিএ -এর সাংবাদিক তালেবানের হাতে মার খেয়ে বলেছেন, “তালেবানের মুখ ও কাজের বিস্তর ফারাক।” খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে তালেবানের হাতে বেধড়ক মার খায় সেই সাংবাদিক। ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয় তারা।

বর্তমানে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে আফগানিস্তানের সংবাদ মাধ্যমগুলি। মহিলা সাংবাদিক হলে প্রতিবন্ধকতা বেড়ে যায় আরও কিছু গুণ বেশি। তবুও সাকিনার মত মহিলা সাংবাদিক টোলো নিউজের জ়াহরা রাহিমি, হাসিবা আত্তকপল, আরিয়ানা টিভির নাসরিন শিরজ়াদরা তালিবানকে প্রশ্ন করেই চলেছেন। তবে কোন প্রশ্নের উত্তর গুলিতে আসে তারও অপেক্ষায় মহিলা সাংবাদিকরা।