বলছে এখন নন্দীগ্রাম সবার মুখে জয় শ্রীরামঃ স্মৃতি ইরানি

 

হলদিয়া: এবার পাকাপাকি ভাবে যুদ্ধ শুরু হতে চলেছে নন্দীগ্রামে। গত বুধবারই নন্দীগ্রামের তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার শুক্রবার বিজেপির প্রার্থী হয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন শুভেন্দু অধিকারী। তার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগে হলদিয়াতে মিছিলে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি ও ধর্মেন্দ্র প্রধান।

এদিন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি নানা ভাষায় তৃণমূল কংগ্রেসকে কটাক্ষ করেন। স্মৃতি ইরানি তিনি তার বক্তব্যে বলেন, “শুভেন্দুদাকে আজকে এখানে যতজন আশীর্বাদ জানানোর জন্য এসেছে ওটা দেখেই এখন দিদিও জানতে চেয়েছেন ‘বলছে এখন নন্দীগ্রাম সবার মুখে জয় শ্রীরাম’। রাম রাজ্যের কথা কল্পনা করা ন‍্যায় এবং গৌরবের। রাম রাজ্য মহিলাদের সম্মানের জন্য।

দিদি এখন বলেছেন মেয়েকে ভোট দাও। তাই জন্য আজকে নন্দীগ্রামের সামনে এসে আপনাকে জিজ্ঞাসা করতে এসেছি কোন মেয়েকে ভোট দিতে হবে দিদি। যে একটা আশি বছরের মাকে মেরে মেরে একাকার করে দেয় সেই মেয়ে? যে মা দুর্গার মূর্তির বিসর্জন হতে দেয় না সেই মেয়েকে ভোট দেব? এরপরেও নন্দীগ্রামে ভোটের জন্য এসে চন্ডী পাঠ করছেন। তাই বলছেন খেলা হবে। দিদি খেলাটা দেখো কত বিরাট।”

কেন্দ্রীয় প্রকল্প নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, “রাষ্ট্রীয় জীবিকা মিশনের নাম বদলে দিদি বাংলায় করলেন আনন্দধারা। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার নাম বদলে দিদি করলেন বাংলার গৃহ প্রকল্প। কাজ করছেন মোদি আর ফটো তুলছেন দিদি। দিদি বলছেন খেলা হবে। আজকে দিদি কে জানাতে চাই তুমি শুধু বাংলার সাথে খেলাই করেছো।

মানুষের জীবনের সঙ্গে তুমি খেলা করেছো। মহিলাদের সম্মানের সাথে তুমি খেলা করেছ। আমি আজকে জানাতে চাই দিদি খেলা করেই তুমি ভবানীপুর ছেড়েছো। ভবানীপুরের সাথে খেলা করে এবার তুমি নন্দীগ্রামের সাথে খেলা করতে চাও। বিজেপির পক্ষ থেকে ইলেকশন কমিশনকে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। ডিএম, এসপি থানায় তৃণমূলের সাথে কি খেলা করছে। আমি আজকে দিদিকে জানাতে চাই দিদি তুমি খেলা করো মোদি করবে আসল পরিবর্তন।

প্রধানমন্ত্রী কিষান সম্মান নিধি প্রকল্প দেশে ১০ কোটি কৃষককে দেশে ১লক্ষ কোটি টাকা দিয়েছে। কিন্তু বাংলার কৃষকদের কিন্তু তা দেওয়া হয়না। প্রধানমন্ত্রী সারাদেশে আয়ুষ্মান যোজনা করেছেন। কিন্তু দিদি তোমার খেলায় তুমি বাংলার গরিবদের আয়ুষ্মান যোজনা পেতে দিলেনা। তাই বাংলা এখন নিশ্চিত করেছে তৃণমূল এবার যাচ্ছে বিজেপি এবার আসছে।”

শুক্রবার সকালে প্রথমে শুভেন্দু বাড়ি থেকে বেরিয়ে নন্দীগ্রামের ঐতিহ্যশালী সিংহবাহিনী মন্দিরে গিয়ে পুজো দেন। এরপর সেখান থেকে তিনি নন্দীগ্রামের জানকীনাথ মন্দিরে গিয়ে পুজো দেন। সরাসরি যান শহীদ বেদীতে। সেখানে শহীদদের শ্রদ্ধা জানানোর পর শহীদ পরিবারদের সঙ্গে কথা বলে শুভেন্দু হলদিয়াতে মনোনয়নের উদ্দেশ্যে রওনা হন। সেখানে তখন অপেক্ষা করছিলেন বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা। শুভেন্দু হলদিয়ার বিজেপির মঞ্চে রাস্তায় উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন কর্মী-সমর্থকরা।

পাশাপাশি এদিন উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানও। শুভেন্দু বলেন, “নন্দীগ্রাম শুধু একটি বিধানসভা কেন্দ্র নয়, এর সঙ্গে বাংলার ১১ বছরের পরিবর্তনও যুক্ত। তৃণমূল একটা প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতা পশ্চিমবঙ্গের শেষ হয়ে গিয়েছে। এই দলের নেত্রী ও তার ভাইপোর সব,  বাকি সব ল্যাম্পপোস্ট। এর থেকে রাজ্যকে উদ্ধার করতে নেমেছি। নন্দীগ্রামের সঙ্গে জড়িত ২০১১ সালের রাজনৈতিক পরিবর্তন। এবার ফের আরেক পরিবর্তনের পালা। নন্দীগ্রাম থেকেই নতুন আশা নিয়ে পরিবর্তন হবে রাজ্যে।”

আত্মবিশ্বাসী শুভেন্দু আরো বলেন, “প্রথম হবো আমরাই। ২রা মে আমরাই সরকার গড়বো। জেলার সব কটা আসন দখল করব।” শুভেন্দু মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে এসে বেরিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, “পদ্ম ফুলের যে প্রার্থী হবে সে হাফ লাখ ভোটে জিতবে। এবারে আমিও নন্দীগ্রামের ভোটার। আমি নন্দীগ্রামের ভূমিপুত্র। উনি পাঁচবছর অন্তর আসেন, কিন্তু আমি সবসময় থাকি। ৫০- ৫২টা বুথে ওদের খেলাধুলা করার ইচ্ছা আছে। এবারে আর পারবে না। আগের দিন রাত্রে থেকে আমি থাকবো। ভোর পাঁচটা থেকে আমি ঘুরব।”

এদিন শুভেন্দুর সঙ্গে মনোনয়নপত্র জমা দেন মহিষাদল বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী বিশ্বনাথ ব্যানার্জি, হলদিয়া বিধানসভা কেন্দ্রের প্রার্থী তাপসী মন্ডল। মঞ্জুশ্রী মোড় থেকে মহকুমা শাসকের দপ্তর পর্যন্ত মিছিল করে মনোনয়ন পত্র জমা দিতে চান তারা। মিছিলে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি ও পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান।