গর্ভপাত নয় জন্ম দিতে হবে গর্ভস্থ শিশুকে, গর্ভস্থ ভ্রূণের আইনি অধিকারের মান্যতা দিলো হাইকোর্ট

ডেস্ক: কোনো শিশু ভূমিষ্ঠ হলে তবেই কি তাকে তার প্রাণের অস্তিত্ব থাকে? গর্ভে থাকা ভ্রূণের ও প্রাণ থাকে, তাহলে গর্ভপাতের সময় সেই প্রাণের দাম দেওয়া হয় না কেনো? এমনটাই প্রশ্ন তুললো কেরল হাইকোর্ট। খারিজ করলো গর্ভাবস্থার 31 সপ্তাহ চলাকালীন এক মহিলার গর্ভপাতের আবেদন।

সম্প্রতি কেরলের হাইকোর্টে 31 সপ্তাহের গর্ভবতী এক মহিলা গর্ভপাতের আবেদন জানিয়েছেন। এর কারণ হিসেবে তিনি জানিয়েছিলেন, গর্ভস্থ ওই শিশু মানসিক ভাবে বিকলাঙ্গ হওয়ার সম্ভাবনা ধরা পড়েছে মেডিকেল পরীক্ষায়। তবে গর্ভপাত আইন 1971 অনুযায়ী, কুড়ি সপ্তাহের পর গর্ভপাত করানো বেআইনি। তাই আদালতে তরফ থেকে জানানো হয় গর্ভপাত করানোর নির্দিষ্ট সময়সীমা পার করে ফেলেছেন মহিলা সুতরাং গর্ভপাত করানোর অনুমতি দেওয়া সম্ভব নয়।

কেরলের হাইকোর্টের বিচারপতি পিবু সুরেশ কুমার এই আর্জি খারিজ করে জানান, “ভ্রূণ তৈরির মুহূর্ত থেকেই গর্ভস্থ শিশুর প্রাণ থাকে। সুতরাং একটি গর্ভস্থ শিশুকে ভূমিষ্ট শিশুর থেকে আলাদাভাবে দেখার কোনও কারণ নেই। একটি গর্ভস্থ শিশুরও প্রাণ রয়েছে এবং আইনেও গর্ভস্থ শিশুর অধিকারকে মান্যতা দেওয়া হয়। যদি একটি গর্ভস্থ সন্তানকে একজন ব্যক্তি হিসেবে গণ্য করা যায়, তবে গর্ভস্থ সন্তানের জীবনের অধিকারকে সংবিধানের ২১ অনুচ্ছেদের অধীনে নিশ্চিত মায়ের মৌলিক অধিকারের সঙ্গে সমতুল্য বলে মনে করা যেতে পারে। ”

আবেদনকারী মহিলার আর্জিতেই আলাপ্পুজা মেডিকেল কলেজের সুপারিনটেনডেন্ট একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করে কোন মহিলার পরীক্ষার নির্দেশ দেয়। মেডিকেল বোর্ডের তরফে জমা দেয়া রিপোর্টে বলা হয় গর্ভপাত না করা হলে এবং অপরিণত অবস্থায় ওই সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে শারীরিক জটিলতার কারণে তাকে দীর্ঘ সময় হাসপাতালে থাকতে হতে পারে।

গর্ভপাত আইন এর 32(2) নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, যদি গর্ভবতী মহিলার প্রাণের ঝুঁকি থাকে বা সন্তানের কারণে তার মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে কিংবা শিশুটি জন্মের পর শারীরিক ও মানসিকভাবে গুরুতর অসুস্থ বা বিকলাঙ্গ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তবেই গর্ভপাত করানোর অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে গর্ভধারণে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে গর্ভপাত করাতে হবে।

আবেদনকারী মহিলার হয়ে পক্ষে আইনজীবী ভিনিতা বি আদালতে জানান, ওই মহিলার মেডিক্যাল রিপোর্টে ও গর্ভপাত করানো স্বপক্ষে বলা হয়েছে। এর জবাবে বিচারপতি বলেন, “গর্ভবতী মহিলার মৌলিক অধিকার সর্বতভাবে রক্ষা করা হলেও মায়ের পাশাপাশি গর্ভস্থ সন্তানের অধিকারের ভারসাম্য বজায় রেখেই এই রায় দেওয়া হয়েছে। যদি মায়ের প্রাণের ঝুঁকি থাকে, তবে রায় অবশ্যই গর্ভবতী মহিলার সপক্ষেই দেওয়া হবে। কারণ মায়ের জীবন বাঁচানো না গেলে শিশুর জীবনও বাঁচানো যাবে না।”

মেডিকেল বোর্ড যদি জানায় যে, গর্ভাবস্থার মায়ের জীবন বা স্বাস্থ্যের জন্য কোনরকম ঝুঁকি নেই সেক্ষেত্রে সংবিধানের 21 অনুচ্ছেদের অধীনে মৌলিক অধিকার অনুযায়ী জন্মের অধিকার দেয়া হবে গর্ভস্থ সন্তানকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *