মানব দেহে শূকরের কিডনি! চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যাপক সাফল্য

ডেস্ক: অঙ্গ প্রতিস্থাপনের একাধিক ঘটনা আমরা শুনেছি। তবে সেটা সেটা এক মানবের শরীরের কোনো অঙ্গ অন্য একটি মানবের শরীরের যুক্ত করার। একবিংশ শতাব্দীতে প্রযুক্তিকে আরও কিছু ধাপ এগিয়ে আবিষ্কার হলো মানব দেহে শূকরের কিডনি লাগানোর পক্রিয়া।

নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসকরা মানবদেহে শূকরের কিডনি প্রতিস্থাপন করে ইতিবাচক ফলাফল পেয়েছে। আর এই ঘটনাটি সামনে আসার পর রীতিমত শোরগোল ফেলে দেয় চিকিৎসক মহলে। সূত্র অনুযায়ী, 25 শে সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে কিডনি প্রতিস্থাপনের এই অস্ত্রপ্রচার হয়েছিল। এবং মানব দেহে শূকরের কিডনি লাগানোর পর দেহের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা সঠিকভাবে কাজ করছে। এবং এই ফলাফল যথেষ্ট ইতিবাচক বলেই মনে করছেন চিকিৎসক মন্ডলীর প্রধান ডক্টর রবার্ট মন্টগোমেরি। তিনি জানিয়েছেন মানবদেহে মূত্র উৎপাদনে কিডনি যে ভূমিকা পালন করে, প্রতিস্থাপনের পর শূকরের কিডনি ও সেই কাজ করতে সক্ষম।

নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নেফ্রোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান পিনাকী মুখোপাধ্যায় বলেন, “এই পদ্ধতিকে জ়েনোট্রান্সপ্লান্টেশন (Xenotransplantation) বলে। অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ইতিহাসে প্রথম জ়েনোট্রান্সপ্লান্টেশন নিয়েই গবেষণা হয়। তখন শূকর ও কুকুরের কিডনি নিয়ে গবেষণা হলেও সবকটি প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়, কারণ তখন আধুনিক ওষুধপত্র ছিল না। তবে মানবদেহের শূকরের কিডনির কার্যকারিতা দীর্ঘমেয়াদি হবে কিনা সেই নিয়েও সংশয় রয়েছে। শূকরের কিডনির কার্যকারিতা যদি তিনমাসও হয় সেটাও চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী সাফল্য। অনেক মানুষের প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হবে। তিনমাস না গেলেও এই সাফল্য নিয়ে জোর দিয়ে কিছু বলা সম্ভব নয়।”

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, শূকরের জিনে উপস্থিত আল্ফা জেল নামক এক ধরনের শর্করা সমস্যার তৈরি করছিল। মানবদেহে শূকরের কিডনি প্রতিস্থাপিত হলেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাচ্ছিল। নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিস্থাপন বিভাগের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন শূকরের জিনগত পরিবর্তন করে ওই শর্করা বাদ দেওয়া হয় এবং তারপরেই কিডনি প্রতিস্থাপনের পর তা সফলভাবে কাজ করতে শুরু করেছে। ভবিষ্যতে এই প্রক্রিয়ার বাস্তবায়ন সফল হলে বিশ্ব জুড়ে প্রচুর মানুষের প্রান বাঁচানো সম্ভব হবে। তবে এখনই এই গবেষণা নিয়ে সম্পূর্ণ নিশ্চিত হতে পারছেন না চিকিৎসকদের একাংশ।

এ প্রসঙ্গে শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালের নেফ্রোলজি বিশেষজ্ঞ ললিত অগরওয়াল জানিয়েছেন “শূকরের দেহে এক বিশেষ ধরনের গ্লুকোজ থাকে, সেই গ্লুকোজ থাকলে মানবদেহ সেই প্রতিস্থাপনকে প্রত্যাখ্যান করে। বর্তমানে বিজ্ঞানীরা জিনের চরিত্রে বদল ঘটিয়ে সেই শর্করা শূকরের দেহ থেকে সরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এই গবেষণা এখন প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এখনও চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত পৌঁছানোর সময় আসেনি। তবে আমি আশাবাদী।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *