ব্রিটিশ ভারতের প্রথম অনুশীলনকারী ডাক্তারদের মধ্যে অন্যতম একজন রুক্মা বাঈ

ডেস্ক: রুক্মা বাঈ একজন ভারতীয় চিকিৎসক এবং নারীবাদী ছিলেন। তিনি এক মারাঠি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার যখন ২ বছর বেশ তার পিত মারা যান। পিতার মৃত্যুর ৬বছর পর তার মাতা বোম্বের বিখ্যাত চিকিৎসক ও সামাজিককর্মী ডাঃ সখারাম অর্জুনকে বিবাহ করেন।

১১ বছর বয়সী রুক্মা বাঈকে তার সৎ বাবার এক সম্পর্কিত ভাই ১৯ বছর বেশি দাদাজী ভিকাজির সাথে বিবাহ দেওয়া হয়। ঠিক হয় যে, পারম্পরিক আদর্শ থেকে সরে গিয়ে, দাদাজী রুক্মা বাঈ এর পরিবারের সাথে থাকবেন ঘর জামাই হিসাবে তার সম্পূর্ণ খেয়াল রাখা হবে। তার কাছে প্রত্যাশা ছিল শিক্ষা গ্রহণ করবেন এবং ” একটি ভালো মানুষ হবেন” .

ভিকাজির মায়ের মৃত্যুর পর তিনি সখারাম অর্জুনের বিরুদ্ধে গিয়ে তার মামার সাথে বসবাস শুরু করেন। ধীরে ধীরে তিনি অলস ও পথভ্ৰষ্ট হয়েগেলেন , শিক্ষার প্রতি তার কোনো বিরাগ ছিলনা। তিনি অবশেষে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন এবং আশা করলেন রুক্মা বাঈ এর সম্পত্তি দিয়ে ঋণশোধ করবেন তিনি।

১২ বছর বয়সী রুক্মা বাঈ ধুরমাজীর পরিবারে গিয়ে ভিকাজীর সাথে বসবাস করতে অস্বীকার করেন, তার এই মতামতে সমর্থন করেন তার সৎ বাবা।

১৮৮৪ এর মার্চ মাসে, ভিকাজী তার আইনজীবীর মাধ্যমে সখারাম অর্জুনকে একটি আইনি নোটিশ পাঠান, তাদের বিবাহ জীবনে বাধা দিতে বিরত থাকতে বলে। অবশেষে সখারাম অর্জুন আইনি সাহায্য নেন, রুক্মাবাঈ কেন ভিকাজির সঙ্গে কেন থাকবেননা তার কারণ দর্শান।

১৮৮৫ সালে, “ভিকাজী বনাম রুক্মা বাঈ, ১৮৮৫” শিরোনামে, ভিকাজীর “বিবাহ অধিকার পুনঃস্থাপন” মামলা আদালতে ওঠে। ১৮৮৬ সালে, মামলাটি পুনর্বিচারের জন্য আনা হয়েছিল। মামলাটি সমাজের বিভিন্ন বিভাগ থেকে সমালোচনার সৃষ্টি করে, কিছু ক্ষেত্রে দাবি করা হয় যে, আইনটি হিন্দু প্রথার পবিত্রতাকে সম্মান করে না। বাল গঙ্গাধর তিলক তাঁর পরিচালিত একটি পুনে সাপ্তাহিক মারহাট্টাতে লিখলেন যে, বিচারপতি পিনহী হিন্দু আইনের মাহাত্ম্য বুঝতে পারছেন না, এবং তিনি “সহিংস উপায়” দ্বারা এর সংস্কার করতে চাইলেন। ১৮৮৬ সালের ১৮ই মার্চ মামলার বিরুদ্ধে প্রথম আপীল করা হয় এবং প্রধান বিচারপতি স্যার চার্লস সার্জেন্ট ও বিচারপতি এল.এইচ. বেইলী তাকে সমর্থন করেন। ৪ঠা মার্চ ১৮৮৭, বিচারপতি ফারান, হিন্দু আইনের ব্যাখ্যা ব্যবহার করে, রুক্মা বাঈকে “তাঁর স্বামীর সঙ্গে থাকুন বা ছয় মাস কারাদণ্ডের মুখোমুখি হন”, এই আদেশ দেন। রুক্মা বাঈ বলেছিলেন যে, রায় মেনে চলার বদলে তিনি কারাগারে যাবেন। এর ফলে আরও আন্দোলন ও সামাজিক বিতর্ক ঘটে। বাল গঙ্গাধর তিলক কেশরিতে লিখলেন ‘রুক্মা বাঈয়ের প্রতিবাদ আসলে ইংরেজি শিক্ষার ফল এবং ঘোষণা করলেন যে, হিন্দুধর্ম বিপদের মুখে। অন্য দিকে, ম্যাক্স মুলার লেখেন যে আইনি পথে রুক্মা বাঈয়ের মামলার সমস্যাটির সমাধান হবেনা এবং রুক্মা বাঈয়ের শিক্ষা তাকে তার নিজের পছন্দের সেরা বিচারক করে তুলেছে।

আদালতে মামলাটি অনেকদিন চলে, যার ফলে বিবাহের শপথের বৈধতা নিশ্চিত হয়। উপায়ন্তর না থাকায় রুক্মা বাঈ রাণী ভিক্টোরিয়া কে আবেদন করেন। তিনি আদালতকে বাতিল করে বিয়ে ভেঙ্গে দেন।ওনার এই সংঘর্ষের জন্যেই মেয়েদের বিবাহ এর বয়স ১২ থেকে ১৮ করা হয়। তারপর তিনি বিদেশে গিয়ে ডাক্তারি পড়াশোনা শেষ করে আসেন নিজের দেশে। এখানে এসে বহু মহিলার চিকিৎসা করেকরে তিনি জনগনের সাহায্য করেন।

১৮৮৮ সালে ভিকাজীর সাথে বন্দোবস্ত হয়েছিল, তিনি ২হাজার টাকা নিয়ে রুক্মা বাঈয়ের ওপর থেকে তার দাবি দেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *