চাঁদের মাটিতে জল, জ্বালানির উপাদান, মিললো প্রমান !

ডেস্ক: জলই জীবন, অর্থাৎ জল ছাড়া প্রাণধারণ সম্ভব নয় কোনও মতেই। তাই মহাশূন্যে পৃথিবীর বিকল্প খুঁজতে গিয়ে জলের উপরই জোর দিচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। অন্য গ্রহ না হলেও, পৃথিবীর উপগ্রহ চাঁদের বুকে এবার জলের খোঁজ মিলল। চিনের চন্দ্রযান Chang’e 5 অভিযান থেকে আনা নমুনায় চাঁদের বুকে জলের অণুর খোঁজ মিলেছে। চাঁদের বুকে পাথরের নীচে জলের অণু চাপা পড়েছিল বলে জানা গিয়েছে। এই প্রথম হাতেকলেম চাঁদের বুকে জলের অস্তিত্বের খোঁজ মিলল।

ছয় এবং সাতের দশকে আমেরিকা যখন Apollo অভিযান চালায়, চাঁদের মাটি থেকে নমুনা সংগ্রহ করে আনা হয়েছিল। সেই নিয়ে গবেষণাো হয়েছিল দীর্ঘদিন ধরে। কিন্তু সেই সময় চাঁদের মাটিতে জলের অস্তিত্ব খুঁজে পাননি বিজ্ঞানীরা। তাঁদের মাটি একেবারে শুষ্ক, খরখরে বলে জানানো হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে কৃত্রিম উপগ্রহের রিমোট সেন্সিং প্রযুক্তি দ্বার চাঁদের বুকে জলের উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। বিশেষ করে চাঁদের হিমশীতল দুই মেরুতে জল থাকতে পারে বলে মেলে ইঙ্গিত।

চাঁদের মাটিতে সেই জলের উপস্থিতির প্রমাণ পেতেই Chang’e 5 অভিযান চালায় চিন। সেখান থেকে নমুনা সংগ্রহ করে আনা হয় পৃথিবীতে। সেই নমুনা পরীক্ষা করে যা মিলেছে, সেই গবেষণাপত্র সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে Nature Astronomy জার্নালে। ওই গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, চাঁদের বুকে পাথরের নীচে চাপা পড়ে রয়েছে জলের অণু, যা ভবিষ্যতে চাঁদের বুকে উপনিবেশ গড়ার সহায়ক হতে পারে। পাশাপাশি, সহজ হতে পারে খননকার্য চালানোও। চাঁদের মাটি থেকে সংগ্রহ করে আনা নমুনায় MgCI3.6H20 রাসায়নিক ফর্মুলার উপস্থিতি রয়েছে বলেও জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা, যার মধ্যে ৪০ শতাংশই জল।

গবেষণাপত্রে আরও বলা হয়েছে, চাঁদের বুকে যেখানে সরাসরি সূর্যের আলো পড়ে, সেখানেও জলের অণুগুলি জলযোজিত লবণের আকারে বিরাজ করে জলের অণুগুলি। শুধু জলের অণুই নয়, চাঁদের মাটি থেকে সংগ্রহ করে আনা পাথরের টুকরোর মধ্যে অ্যামোনিয়ার খোঁজও পেয়েছেন চিনা বিজ্ঞানীরা, যা রকেট জ্বালানির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, চাঁদের ভৌগলিক ইতিহাস অত্যন্ত জটিল বলেই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।

চাঁদের মাটি থেকে নমুনা সংগ্রহ করে আনতেই Chang’e 5 অভিযান চালায় চিন। ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে নমুনা সংগ্রহ করে ফিরে আসে চন্দ্রযানটি। চিনে চাঁদের দেবীর নামানুসারেই অভিযানের নামকরণ হয়। তাদের এই আবিষ্কারে পৃথিবীর সব দেশই উপকৃত হবে। মহাকাশ অভিযানের দুনিয়ায় এই মুহূর্তে চিন এবং আমেরিকার মধ্যে কড়া প্রতিযোগিতা চলছে। চাঁদ এবং মঙ্গলগ্রহে সম্প্রতি রকেট অবতরণ করেছে চিন। ২০২২ সালে Tiangong Space Station-এর নির্মাণও সম্পন্ন করে তারা। ২০৩০ সালের মধ্যে International Lunar Research Station গড়ার লক্ষ্যও রয়েছে চিনের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *