পাবলিক অ্যাকাউন্ট কমিটির দায়িত্ব নিয়ে রাজ্যে চলছে ছেলেখেলা! বিরোধী দল বঞ্চিত যোগ্য সম্মান থেকে

ডেস্ক: একদিকে রাজ্যের শাসক দল এই অভিযোগ তুলছে যে কেন্দ্র বিরোধী দলকে পিষে ফেলতে চাইছে, কেন্দ্র বিরোধীদেরকে প্রাপ্য সম্মান দিচ্ছে না। আবার অন্যদিকে সেই শাসক দল ই রাজ্যের বিরোধী দলের সাথে ঠিক একই ব্যবহার করছে। যেখানে রাজ্য সরকার বিরোধীদলকে যথাযোগ্য সম্মান দিতে বিরত থাকছে এবং তাদের অধিকার থেকে সরিয়ে রাখছে।

রাজ্য সরকারের এই দ্বিচারিতার উদাহরণ দেখা গেল বর্তমানে পিএসি র চেয়ারম্যান পদের নিযুক্তি করনের মধ্যে দিয়ে। যেখানে পিএসির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয় মুকুল রায়ের হতে।

বিষয়টি একটু খোলসা করে বলা যাক, পিএসি অর্থাৎ পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি কেন্দ্র সহ প্রতিটি রাজ্যে গঠন হয়ে থাকে। যার দায়িত্ব হল কেন্দ্র সরকার বা রাজ্য সরকার কোথায় কি পরিমান টাকা খরচ করছে এবং সে খরচের মধ্যে কোনো কারচুপি আছে কিনা তার হিসেব নিকেশ রাখা। এবং এই পদে যে ব্যক্তিটি সাধারণত নিযুক্ত হয়ে থাকেন তিনি অবশ্যই বিরোধী দলের কোনো এক গণ্যমান্য ব্যক্তি হওয়া দরকার।

কারণটা হলো রাজ্য বা কেন্দ্র সরকার টাকা পয়সা নিয়ে কোনো প্রকার দুর্নীতি করছে কিনা, হিসাবে গন্ডগোল করছে কিনা সেই সমস্তই সঠিকভাবে নজর রাখতে পারবে বিরোধীদলের ব্যক্তি। যেহেতু হিসেবে দায়িত্বে বিরোধী দলের প্রতিনিধি থাকবে সেই কারণে রাজ্যের শাসক দল কোনরকম গোজামিল টাকা-পয়সার সাথে করতে পারবে না। এবং এই পদের জন্য সঠিক ব্যক্তি নিযুক্ত করার দায়িত্বে থাকেন স্পিকার।

মানস ভূঁইয়া

কিন্তু আমাদের রাজ্য সরকার বরাবরই পিএসির দায়িত্বটি কে নিজের হাতের মুঠোয় রাখার চেষ্টা করে এসেছে। এর বহু উদাহরণ পাওয়া গেছে। যেমনটা ধরুন যখন তৃণমূলের প্রধান বিরোধী দল হিসেবে ছিল বাম ও কংগ্রেস, সেই যেহেতু বাম সংখ্যা পিছিয়ে ছিল তখন কংগ্রেসের বিধায়ক মানস ভূঁইয়াকে পিএসির পদে নিয়োগ করা হয়। আর এই পদে নিয়োগ হওয়ার পরেই মানস ভুঁইয়া তৃণমূলে পরিবর্তন হয়ে যান। দীর্ঘ সময় মানস ভূঁইয়া দায়িত্ব পালন করলে তার পরবর্তী সময়ে তিনি রাজ্যসভার সদস্য হওয়ার জন্য পিএসির চেয়ারম্যানের পদত্যাগ করেন।

আর ঠিক তারপরেই কংগ্রেসের আরো এক বিধায়ক শঙ্কর সিংহ কে বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় পিএসির চেয়ারম্যানের পদটি দেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও এই পদটি তে শঙ্কর সিংহ নিয়োগ হওয়ার আগেই তিনি যুক্ত হয়ে যান তৃণমূলের সাথে। এ বিষয়ে যখন বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় কে প্রশ্ন করা হয় তখন তিনি জানান, খাতায়-কলমে শঙ্কর সিংহ এখনো কংগ্রেস বিধায়ক। এবং তার কাছে শঙ্কর সিংহের দল পরিবর্তন করার খবর আসেনি সুতরাং তিনি যা করেছেন তা লিগাল।

শঙ্কর সিংহ

বর্তমানে এ কথা স্পষ্ট যে একই রকম যুক্তি দিয়ে মুকুল রায় কে ও পিএসির চেয়ারম্যানের পদে নিযুক্ত করা হয়েছে। কারণ মুকুল রায় এখনো বিজেপি বিধায়ক। সুতরাং শাসক দলের পক্ষ থেকে এই যুক্তিটি ভেসে আসছে যে বিরোধী দলের কাউকে এই ক্ষমতায় রাখতে হয় তাই মুকুল রায় কেই রাখা হলো। তিনিও তো বিরোধী দলেরই বিধায়ক।

অনেকের বক্তব্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চাইছিলেন না শুভেন্দু অধিকারীকে এই পদে নিযুক্ত করা হোক তাই তিনি মুকুল রায়কে এই পদের ক্ষমতাসীন করেন। কিন্তু সূত্র অনুযায়ী বাংলার পিএসির চেয়ারম্যান পদে নিযুক্ত করার কথা হচ্ছিল বিজেপি বিধায়ক অশোক লাহাড়ি কে। যিনি একজন অতি শিক্ষিত ব্যক্তিত্ব, তিনি একজন অর্থনীতিবিদ। অশোক লাহিড়ী রাজ্য এবং রাজ্যের বাইরে বহু সম্মানে সম্মানিত হন। তার মতো বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব এই পদে থাকলে রাজ্যে অর্থের পরিকাঠামো সঠিকভাবে গড়ে উঠত এবং নির্ভুল কাজ চলত।

বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়

কিন্তু তৃণমূলের এই রকম আচরণ থেকে অনেকেই সন্দেহ করছে তাহলে কি অর্থ নিয়ে তৃণমূল কোনো দুর্নীতি করছে? আর একজন স্পিকার কে সর্বদা নিরপেক্ষ ভাবে চলা উচিত, তাকে উভয় দলকেই একই গুরুত্ব দিয়ে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। কিন্তু এক্ষেত্রে বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় আদৌ নিরপেক্ষতার সাথে কাজ করছেন?

এবং এইসব ঘটনার পরেই বঙ্গ বিজেপি এ কথা প্রকাশ করেন যে যেহেতু তাদের পিএসির চেয়ারম্যানের পোস্টিং দেওয়া হলো না তাই তারা কমিটির কোনো পদেই নিযুক্ত হবেন না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *